বাংলাদেশ

সঞ্চয় তো দূর, উল্টো কমছে ব্যাংক আমানত

জুমবাংলা ডেস্ক :  ব্যাংকে টাকা রেখে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন আমানতকারীরা। কারণ, উচ্চ মূল্যস্ফীতি খেয়ে ফেলছে ব্যাংক আমানতের সুদ। বর্তমানে আমানতে গড় সুদ হার ১০ শতাংশ, যেখানে মূল্যস্ফীতি ১১ শতাংশের বেশি। এতে বিপাকে পড়েছেন সঞ্চয়ের মুনাফার ওপর নির্ভরশীল মানুষ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমানতের সুদের চেয়ে মূল্যস্ফীতি বাড়তি থাকলে সঞ্চয়ের প্রবণতা কমবে। এতে ব্যাংক খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চাকরির জমানো টাকা ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসেবে রেখেছিলেন জিয়াউল হক। সঞ্চয়ের টাকার ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল তিনি। তবে মূল্যস্ফীতির চাপে খরচ বাড়লেও, তার আমানতের প্রকৃত মূল্য দিন দিন কমে যাচ্ছে।

জিয়াউল বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির কারণে আমাদের প্রোটিনটা কমে গেছে। আগে যেমন ভালো খেতে পারতাম, এখন সেটা কমাতে হয়েছে।’

জিনিসপত্রের দাম বাড়ায় নভেম্বর মাসে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশে। যদিও খাদ্যে এ মূল্যস্ফীতি ছাড়িয়েছে ১৩ দশমিক ৮ শতাংশে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সবশেষ তথ্য বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর এক বছরের স্থায়ী আমানতের সুদহার ৮ দশমিক ৬২ শতাংশ, রাষ্ট্রায়ত্ত বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ, বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের ৬ দশমিক ৮৬ শতাংশ এবং বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ।

অন্যদিকে, জমানো টাকার বিপরীতে গড়ে ৯ শতাংশের কম সুদ দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। তাই, ব্যাংকে সঞ্চয় তো দূরের কথা, উল্টো জমানো টাকা ভেঙ্গে সংসার চালাচ্ছেন কেউ কেউ।

একজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘আমরা যে আমানত রাখি, এখন সেটাও ভেঙে ফেলতে হচ্ছে। এটা ভেঙে এখন আমাদের জীবন চালাতে হচ্ছে। আমি আসলে খুব স্বস্তিতে নেই। পেনশনের টাকা দিয়ে তো আমার সংসার চলে না। আমার যদি কোনো ডিপোজিট থাকে কোথাও, সেটা দিয়ে তো আমাকে বাঁচতে হবে।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির তুলনায় ব্যাংক আমানতের মুনাফা কম হলে টাকা রাখার প্রবণতা কমবে। তবে, সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে মূল্যস্ফীতি কমানোয় জোর বাংলাদেশ ব্যাংকের।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, ‘আমরা যে পলিসি রেট হাই করেছি অনেক পরে। এটার ফল পেতে, ২০২৫ সালের মধ্যে আমরা হয়ত ১০ এবং ২০২৬ সালে গিয়ে আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাব।’

বিআইবিএমের সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘কাগজে কলমে কিন্তু সে (আমানতকারী) একটা ইন্টারেস্ট পাচ্ছে। কিন্তু এটা পাওয়ার মধ্যে তো কিছু নেই। কারণ সেটা তো মূল্যস্ফীতিতেই চলে গেছে। সুতরাং সব সময়ই ডিপোজিট রেট অব ইন্টারেস্ট মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি হতে হবে।’

এমনিতেই দুর্বল ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট তীব্র। আমানতের প্রবৃদ্ধি কমে গেলে, ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার সক্ষমতাও কমে যাবে। এতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা কঠিন হবে বলে মত বিশ্লেষকদের।

সোর্স: জুম বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button