দিনের শুরুতে যে কার্যকর মস্তিষ্কের ব্যায়ামগুলো কারা উচিত

দিনের শুরুতে শরীরচর্চার সময় যেমন আপনার পেশীগুলোকে প্রসারিত করেন, তেমনই উদ্দীপক ব্যায়ামে আপনার মস্তিষ্ককে নিযুক্ত করুন। এটি মানসিক ক্ষমতাকে তীক্ষ্ণ করে তুলবে এবং একটি সৃজনশীলতায় সাহায্য করবে। অনেক সময় আধুনিক জীবনের গতি মানসিক ক্লান্তি এবং চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, সহজ, নিয়মিত মস্তিষ্কের ব্যায়াম স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং সামগ্রিক মানসিক তৎপরতা উন্নত করতে কাজ করে। তাহলে, কেন আপনার সকাল এমন একটি রুটিন দিয়ে শুরু করবেন না যা আপনার মস্তিষ্ককে সাফল্যের জন্য প্রস্তুত করে? মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিজ্ঞান দ্বারা সমর্থিত কিছু কার্যকর মস্তিষ্কের ব্যায়াম এখানে দেওয়া হলো-
১. মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন
মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন মস্তিষ্কের কার্যকারিতা উন্নত করার জন্য একটি দুর্দান্ত ব্যায়াম। বর্তমান মুহুর্তের ওপর মনোনিবেশ করে চাপ কমাতে এবং একাগ্রতা বাড়াতে পারেন। ফ্রন্টিয়ার্স ইন সাইকোলজিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন কর্মক্ষম স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ এবং মস্তিষ্কের নমনীয়তা উন্নত করে। সকালে মাত্র ১০ মিনিট মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন বেশ কার্যকরী হতে পারে।
মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশনের জন্য একটি আরামদায়ক অবস্থানে বসুন, চোখ বন্ধ করুন এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের ওপর মনোযোগ দিন। চিন্তাভাবনা জাগলে, আলতো করে আপনার মনোযোগ আপনার শ্বাস-প্রশ্বাসের দিকে ফিরিয়ে আনুন। ধীরে ধীরে এই সহজ অনুশীলন আপনার মানসিক স্বচ্ছতা এবং মানসিক স্থিতিস্থাপকতা উন্নত করবে।
২. মেন্টাল ভিজ্যুয়ালাইজেশন
মেন্টাল ভিজ্যুয়ালাইজেশনের মধ্যে রয়েছে দৃশ্যপট বা কার্যকলাপকে প্রাণবন্তভাবে বিশদভাবে কল্পনা করা। এই কৌশলটি কেবল সৃজনশীলতা বৃদ্ধি করে না বরং স্নায়ুতন্ত্রকেও শক্তিশালী করে। আপনার লক্ষ্য বা কাজকে কল্পনা করে দিন শুরু করুন। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনার কোনো সভা থাকে, তাহলে নিজেকে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উপস্থাপন করার কল্পনা করুন। এটি আপনার মস্তিষ্ককে সাফল্যের জন্য প্রস্তুত এবং ইতিবাচক মানসিক অভ্যাসকে শক্তিশালী করবে।
৩. নতুন কিছু শেখা
নতুন ক্রিয়াকলাপে জড়িত থাকলে তা মস্তিষ্ককে উদ্দীপিত করে এবং নিউরোপ্লাস্টিসিটি বাড়ায়। এটি হলো মস্তিষ্কের অভিযোজন এবং বৃদ্ধির ক্ষমতা। ডালাসের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বারা পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, বুনন বা ফটোগ্রাফির মতো নতুন দক্ষতা শিখলে তা প্রাপ্তবয়স্কদের মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বেশ উন্নত করে।
সকালে কয়েক মিনিট একটি নতুন দক্ষতা অর্জন বা একটি চ্যালেঞ্জিং শখ পুনরায় করে দেখার জন্য উৎসর্গ করুন। সুডোকু ধাঁধা সমাধান করা, বিদেশী ভাষার কয়েকটি শব্দ শেখা, অথবা নতুন কোনো রান্না শেখা হোক না কেন, মূল বিষয় হলো অপরিচিত কিছু দিয়ে মস্তিষ্ককে চ্যালেঞ্জ করা।
৪. শারীরিক কার্যকলাপ
শারীরিক ব্যায়াম মস্তিষ্কের জন্য যেমন উপকারী, তেমন আপনার শরীরের জন্যও উপকারী। জগিং, যোগব্যায়াম, এমনকি দ্রুত হাঁটার মতো অ্যারোবিক ব্যায়াম মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি করে, স্মৃতিশক্তি এবং চিন্তাভাবনা দক্ষতা বৃদ্ধি করে। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের একটি গবেষণায় জোর দেওয়া হয়েছে যে, নিয়মিত ব্যায়াম নতুন মস্তিষ্কের কোষের বৃদ্ধিকে উৎসাহিত করে, বিশেষ করে হিপ্পোক্যাম্পাসে, যা স্মৃতির নেপথ্যে কাজ করে।
আপনার সকালের রুটিনে একটি সংক্ষিপ্ত, উদ্যমী ব্যায়াম যোগ করুন। এটি মেজাজ উন্নত এবং মস্তিষ্ককে দিনের কাজের জন্য প্রস্তুত করে।
আজীবন নিষিদ্ধ হতে চলেছেন ব্রাজিলিয়ান তারকা ফুটবলার
৫. কৃতজ্ঞতা জার্নালিং
কৃতজ্ঞতা অনুশীলন করা কেবল আত্মার জন্যই ভালো নয়; এটি মস্তিষ্কের জন্যও ভালো। প্রতিদিন সকালে আপনি যে তিনটি জিনিসের জন্য কৃতজ্ঞ তা লিখে রাখলে ইতিবাচকতা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং স্নায়ুর কার্যকারিতা উন্নত হতে পারে। আপনার বিছানার পাশে একটি জার্নাল রাখুন এবং ঘুম থেকে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আপনার জীবনের ইতিবাচক দিকগুলো নিয়ে চিন্তা করার অভ্যাস করুন।
সোর্স: জুম বাংলা