বাংলাদেশ

আমরা স্বামী নির্বাচন করতে আসিনি

২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মঞ্চে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটনের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল উত্তেজনা ও বিতর্কে ভরপুর। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তার ব্যক্তিগত জীবনে একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগ ও নানা কেলেঙ্কারির গল্প তখন আলোচিত হয়। বিতর্কের ঝড় সত্ত্বেও ট্রাম্প বিশেষত নারী ভোটারদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সমর্থন অর্জন করেছিলেন, যা অনেকের কাছে ছিল চমকপ্রদ।

এমন এক পরিস্থিতিতে নারী ভোটারদের একটি মন্তব্য ঘুরে ফিরে এসেছে : ‘আমরা স্বামী নির্বাচন করতে আসিনি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে এসেছি।’ এ বক্তব্যের মর্মার্থ ছিল স্পষ্ট- ভোটাররা ব্যক্তিগত জীবনের ঘটনাগুলো উপেক্ষা করে ট্রাম্পের রাজনৈতিক অবস্থান ও নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতিকে মূল্য দিচ্ছিলেন। এ মনোভাবের মধ্য দিয়ে মার্কিন নির্বাচনে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গির উন্মোচন ঘটে, যেখানে রাজনীতির মাপকাঠিতে ব্যক্তিগত জীবনের চেয়ে দেশ পরিচালনার দক্ষতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার ইঙ্গিত মিলেছে।

একই মনোভাব আবারও ২০২৪ সালের নির্বাচনে উঠে আসে, যেখানে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন কমলা হ্যারিস। কমলা হ্যারিস সমতা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও সংখ্যালঘুদের অধিকারকে গুরুত্ব দিয়ে তার প্রচারণা পরিচালনা করলেও, অনেক ভোটার ট্রাম্পের নেতৃত্বের দৃঢ়তা ও অর্থনৈতিক নীতিমালায় আস্থা রাখেন।

ট্রাম্পের অর্থনৈতিক শক্তিমত্তা, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির প্রতি প্রতিশ্রুতি এবং অতীত প্রশাসনের সাফল্যের ওপর ভিত্তি করে ট্রাম্প নিজের অবস্থানকে প্রতিষ্ঠা করেন। ফলে, ভোটারদের কাছে তার রাজনীতির বাস্তব ভিত্তি প্রাধান্য পায় এবং তারা আবারও ব্যক্তিগত জীবনের বিতর্ককে সেকেন্ড প্রায়োরিটিতে স্থান দিয়ে তাকে সমর্থন জানায় ভোটার।

বিশ্লেষকদের মতে, এ সমর্থনের মূলে ছিল ভোটারদের ভিন্নধর্মী চিন্তাভাবনা, যেখানে প্রার্থীর ব্যক্তিগত জীবন বা সম্পর্কের চেয়ে দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা, অর্থনৈতিক দক্ষতা এবং বৈশ্বিক রাজনীতির জটিলতা মোকাবিলার সক্ষমতাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়।

এ ছাড়া কমলা হ্যারিসের প্রচারণার মানবিক ও সামাজিক উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, ট্রাম্পের দৃঢ় রাজনৈতিক অবস্থান অনেক ভোটারকে আকর্ষণ করে, বিশেষত যাদের দৃষ্টিতে আন্তর্জাতিক মঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী অবস্থান এবং অভ্যন্তরীণ অর্থনৈতিক অগ্রগতি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

এদিকে ট্রাম্পের প্রতি নারীদের এ সমর্থন নতুন প্রশ্ন তোলে, সমাজে রাজনৈতিক দক্ষতা কি ব্যক্তিগত জীবনের মূল্যায়নকে ছাপিয়ে যেতে পারে? ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এতসব বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও, ভোটারদের কাছে তার সিদ্ধান্ত গ্রহণের দৃঢ়তা এবং অর্থনৈতিক সাফল্যের প্রতিশ্রুতি তাকে একটি শক্তিশালী নেতৃত্বের প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ২০১৬ সালের সেই বক্তব্য ‘আমরা স্বামী নির্বাচন করতে আসিনি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে এসেছি’- ২০২৪ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যেন নতুনভাবে প্রতিধ্বনিত হয়েছে।

শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী ফলাফল প্রমাণ করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের একটি বড় অংশ নেতৃত্বের শক্তিশালী অবস্থান, কার্যকরী নীতিমালা এবং অভিজ্ঞতাকে অগ্রাধিকার দেয়, যা ট্রাম্পকে তার বিতর্কিত ব্যক্তিগত জীবনের অবকাশ দেয়। তার এই জয়কে একজন রাজনৈতিক নেতার প্রতি ভোটারদের দৃঢ় আস্থা এবং নেতৃত্বের প্রতি তাদের আবেগের পরিচায়ক হিসেবে দেখা যায়, যা আমেরিকার রাজনৈতিক মানসিকতার একটি ভিন্ন চিত্র তুলে ধরে।

সোর্স: দৈনিক দিগন্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button