বিতর্কিত কর্মকর্তা কুমিল্লার এসপি নাজির আহমেদ খান
বিতর্কিত কর্মকর্তা কুমিল্লার এসপি নাজির আহমেদ খান
ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত বিপ্লবের ১০০দিন পর পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে বির্তকিত কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়াকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে পুলিশ বাহিনীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। পেশাদার, সৎ ও আওয়ামী সরকারের সময় চরমভাবে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের রেখে খুন-গুমসহ নানা অনৈতিককাজে সম্পৃক্ত পুলিশ কর্মকর্তা মনির, হাবিব ও হারুনের সহযোগিদের পদায়ন নিয়ে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের নানা অপকর্মের সহযোগি এসপি মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খানকে কুমিল্লা জেলার এসপি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে এ পদায়ন করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে নাজির আহমেদ জুলাই বিপ্লবের সময় গাজীপুরের কিলার খ্যাত জাহাঙ্গীরকে পুলিশের প্রায় ৩০টি অস্ত্র তুলে দিয়েছিল ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে ঠেকানোর জন্য। নিজেও সরাসরি ছাত্র-জনতার বিপ্লবকে রুখে দিতে হাসিনার গদি ঠেকাতে গুলি ছুড়েন। পরে ছাত্র-জনতা জাহাঙ্গীরসহ তার উপর আক্রমণ করলে সে পালিয়ে যায়। পরিস্থিতি শান্ত হলে নিজের কূকর্ম ঢাকতে টাকা দিয়ে সব কিনে নিচ্ছে নাজির।
অন্যদিকে বহু অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে এবং কুখ্যাত পুলিশ কর্মকর্তা ডিবি হারুনের সহযোগী হিসেবে পরিচিত অতিরিক্ত ডিআইজি মো: দেলোয়ার হোসেনকে সারদা পুলিশ একাডেমি থেকে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) বদলি করা হয়েছে গত ১১নভেম্বর। এর আগে এই বির্তকিত কর্মকর্তা দু’দফা গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মরত থেকে আওয়ামী সরকারের লাঠিয়াল হিসেবে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। অতিরিক্ত ডিআইজি মো: দেলোয়ার হোসেনকে সারদা পুলিশ একাডেমি থেকে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের বদলি করার ঘটনায় এরই মধ্যে গাজীপুরের সাধারন মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।
সম্প্রতি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদেন বলা হয়েছে, স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের দোসর এসপি নাজির আহমেদকে কুমিল্লা জেলার এসপি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নাজির আহমেদ খান ২৭ তম বিসিএস (পুলিশ) কর্মকর্তা। নিজ জেলা: আলফাডাংগা, ফরিদপুর। এর আগে তিনি ডিসি (নর্থ), জিএমপি, আগস্ট, ২০২৪, ডিসি, ডিবি, জিএমপি (২০২৩ থেকে আগস্ট ২০২৪), ডিসি, (ট্রাফিক ওয়ারি), ডিএমপি (২০২২-২০২৩), ডিসি, (প্রকিউরমেন্ট এন্ড ওয়ার্কশপ), ডিএমপি (২০২২), এডিসি, (প্রকিউরমেন্ট এন্ড ওয়ার্কশপ), ডিএমপি (২০১৯-২০২২), এডিসি (লালবাগ) ডিএমপি, (২০১৬-২০১৯), সিনিয়র এসি, ডিএমপি, (২০১৫-২০১৬) এবং সিনিয়র এসপি, বগুড়া জেলা (২০১৩-২০১৫) কর্মরত ছিলেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এসপি মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান ১৯৯৫-২০০১ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ক্যাম্পাস ছাড়ে ও লোক চক্ষুর অন্তরালে চলে যায়। পরবর্তীতে সরকার পরিবর্তন হলে ২৭ তম বিসিএস এ ২য় বারের রেজাল্টে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশ ক্যাডারে জয়েন করেন। এলাকায় জনশ্রুতি আছে তার বাবা আব্দুল গফুর খান কোনদিন মুক্তিযুদ্ধই করেননি। তার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। আওয়ামী স্বৈরশাসনের অন্যতম কারিগর, আলফাডাঙ্গার কুখ্যাত সন্তান ডিএমপির সাবেক কমিশনার আসাদুজ্জামান মিয়ার ক্যাশিয়ার ও পারিবারিক আতœীয়। ২০১৪ সালের বগুড়া সিনিয়র এসপি অবস্থায় ভোটারবিহীন নির্বাচনকে ঠেকাতে বিরোধী দলের কার্যক্রম নষ্ট করার অন্যতম কারিগর। ২০১৮ সালে ঢাকার লালবাগ এলাকায় নিশি ভোটের মূল সমন্বয়ক। লালবাগ ও সূত্রাপুর এলাকায় কুখ্যাত হাজী সেলিমের সকল অপকর্মের সহযোগী। ডিসি, ডিবি হিসেবে গাজীপুরে ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচনে ন্যাক্কারজনকভাবে ভূমিকা পালন। চরম দূর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত। পুরো চাকুরীজীবনে আওয়ামী বিরোধী নেতা-কর্মীদের মামলা-হামলা, নির্যাতনের অত্যন্ত আগ্রাসী ভূমিকা পালন করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, এই দূর্নীতিবাজ, স্বৈরাচার আওয়ামী দোসর নাজির আহমদেকে কুমিল্লার এসপি করার জন্য তদবীর করেছেন জামায়াত নেতা তাহের।
গোয়েন্দা সংস্থার অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিসিএস পুলিশ ২১তম ব্যাচের কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং গাজীপুর মহানগরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দেলোয়ার হোসেন সাঈদী নিজেকে আওয়ামী প্রমাণ করার জন্য তার নামের পাশ থেকে এফিডেফিটের মাধ্যমে সাঈদী শব্দটি বাদ দিয়ে দেন। তিনি কুখ্যাত পুলিশ কর্মকর্তা ডিবি হারুন এর সহযোগী ছিলেন। হারুন যখন গাজীপুর জেলার এসপি ছিল তখন সাইদি তার অ্যাডিশনাল এস পি হিসাবে হারুনের টাকা সংগ্রহের কাজ করতেন। গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে জুয়ার বোর্ড বসিয়ে মাসোহারা নেয়া, রাতের অন্ধকারে মানুষের জমি জবরদখল করে, অন্যের জমিতে দেয়াল নির্মাণের মাধ্যমে অবৈধ দখল করতেন কুখ্যাত পুলিশ কর্মকর্তা ডিবি হারুন। আর এই কাজে তাকে সহায়তা করতেন দেলোয়ার হোসেন। এর পুরস্কার স্বরূপ হারুন তাকে পরবর্তীকালে জামালপুর জেলার এসপি পদে পদায়ন করে।
২০১৮ সালে রাতের ভোটের কারিগর এই দেলোয়ার হোসেন। সে সময় তিনি সিরাজগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গাজীপুর মহানগরের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার থাকাকালীন কমিশনার মোল্লা নজরুলের ক্যশিয়ার হিসেবে কাজ করেন এই দেলোয়ার। উল্লেখ্য যে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে কমিশনার মোল্লা নজরুল দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ার পেছনে টাকা পয়সার লেনদেন করেন এই দেলোয়ার হোসেন। তিনি তখন গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। উত্তরার দিয়া বাড়িতে নৌভুমি নামে একটি রেস্টুরেন্টের মালিক এই দেলোয়ার হোসেন। গাজীপুরে তার বিরুদ্ধে একাধিক আর্থিক কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। স্বৈরাচার সরকারের সময় বিরোধীদলের উপর অত্যাচার নিপীড়নের কারণে কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বিপিএম, পিপিএমসহ একাধিক পুরস্কারে ভূষিত হন। উল্লেখ্য স্বৈরাচার হাসিনা সরকারের সময় যারা বিরোধীদলের উপর অত্যাচার নির্যাতন করেছে এবং ভোট চুরি করে হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখেছে তারাই এই পদকগুলো পেয়েছে। এই কুখ্যাত পুলিশ কর্মকর্তা পুনরায় একজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে ৫০ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে আবার গাজীপুর মহানগর পুলিশে পোস্টিং নিয়েছেন। তার এই পদায়নের কারণে গাজীপুর মহানগরের সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্রঃ ইত্তেফাক
সূত্র: dailycomillanews