বাংলাদেশ

ট্রাম্পের বিজয়ে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার কি কোনো লাভ হবে?

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা খুব আশা নিয়ে আছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে। তার আশা, ভারত ও ট্রাম্প মিলে বাংলাদেশে তাকে ফিরে আসতে সহায়তা করবেন। এমনকি, ক্ষমতার মসনদও ফিরে পাবেন, এমন দূরাশায় আছেন। তার এ আশা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনের আগেই প্রকাশিত হয়েছে। ভারতে বসেই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা তার এক কর্মীর সাথে ফোনালাপে (প্রথম ফাঁস হওয়া ফোনালাপ) ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ভোট দেয়া ও ক্যাম্পেইন করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এই ফোনালাপে উৎসাহী হয়ে দেশে থাকা তার দলের নেতাকর্মীরাও মনেপ্রাণে ট্রাম্পকে সমর্থন দিতে থাকে।

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। এখন তারা আশায় বুক বেঁধেছেন, ট্রাম্প তাদের নেত্রীকে দেশে ফিরিয়ে আনবেন। এতে অন্তর্বর্তী সরকার সরকার উল্টে যেতে পারে। আওয়ামী ঘরানার এক সাংবাদিকের সাথে ট্রাম্পের বিজয়ের পরপর কথা হয়েছিল। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘দেখেন না কি হয়? ছয়টা মাস যাইতে দেন।’ হয়ত, তার মতো আওয়ামী লীগের প্রায় সব নেতাকর্মী ও সমর্থক একই চিন্তা করছে। হ্যাঁ, ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিপুল বিজয়ে তাদের আশা পূরণ হয়েছে। এতে তারা যারপরনাই খুশি। তাদের এই খুশির ঢেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আছড়ে পড়তে দেখা গেছে। তাদের নেত্রী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা তো অতি উৎসাহী হয়ে ভারতে বসেই নিজেকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ট্রাম্পকে অভিনন্দনও জানিয়ে দিয়েছেন। এতে তাকে আশ্রয় দেয়া খোদ ভারতও বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে। কালবিলম্ব না করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল এক প্রেস ব্রিফিংয়ে স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘ভারত শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বিবেচনা করে।’ তিনি এ কথা বলেন, ভারতের এক সাংবাদিক যখন জানতে চান, ভারত শেখ হাসিনাকে ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী’ নাকি ‘নির্বাসিত প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে বিবেচনা করছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে। শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে ভারত এমনিতেই আভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিকভাবে চাপের মধ্যে রয়েছে। এখন ভারত যদি শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আখ্যায়িত করে, তবে তা তার জন্য হবে ভয়াবহ চাপ। বাংলাদেশের সাথে তার সম্পর্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গণে তার পরিস্থিতি কী হবে, তা সহজেই অনুমেয়।

শেখ হাসিনা যে একজন মিথ্যাবাদী ও ষড়যন্ত্রের নিপুণ কারিগর, তা দেশের মানুষ বহু আগে থেকেই জানে। বলা হয়ে থাকে, আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিকভাবেই ষড়যন্ত্র ও ধংসাত্মক আন্দোলনকারী একটি দল। একটি স্বৈরতান্ত্রিক, স্বার্থপর ও অহংকারি দল। এসবে দলটি দক্ষ ও পটু হলেও দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে বরাবরই চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। নিজেকে একটি স্বৈরতান্ত্রিক দলে পরিণত করেছে। এর প্রমাণ পাওয়া যায়, স্বাধীনতার পর শেখ মুজিবের দেশ পরিচালনা থেকে। স্বাধীনতার আগে আওয়ামী লীগ অসহযোগসহ বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিলেও স্বাধীনতার পর দেশ পরিচালনায় ছিল পুরোপুরি ব্যর্থ। শেখ মুজিবের আমিত্ব ও স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের ইতিহাস সকলেরই জানা। তার প্রতিদ্বন্দ্বী কিংবা বিরোধিতাকারিদের একেবারেই সহ্য করতে পারতেন না। ভাবতেই পারতেন না, তার বিপক্ষে কেউ থাকতে পারে। এর একটি ছোট্ট উদাহরণ প্রখ্যাত সাহিত্যিক আহমদ ছফার বিখ্যাত বই ‘যদ্যপি আমার গুরু’তে উল্লেখ করা হয়েছে। বইটির ৭৩ পৃষ্ঠায় আহমদ ছফার সাথে অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের আলাপচারিতার একটি অংশ আছে, সেখানে আব্দুর রাজ্জাক চলতি ভাষায় বলেন, ‘নাইন্টিন সিক্সটি নাইন থেইক্যা সেভেন্টি ওয়ান পর্যন্ত সময়ে শেখ সাহেব যারেই স্পর্শ করেছেন, তার মধ্যে আগুন জ্বালাইয়া দিছেন। সেভেন্টি টুতে একবার ইউনিভার্সিটির কাজে তার লগে দেখা করতে গেছিলাম।

শেখ সাহেব জীবনে অনেক মানুষের লগে মিশছেন, ত আদব লেহাজ আছিল খুব ভালো। অনেক খাতির করলেন। কথায়-কথায় আমি জিগাইলাম, আপনের হাতে ত অখন দেশ চালাইবার ভার, আপনে অপজিশনের কী করবেন। অপজিশন ছাড়া দেশ চালাইবেন কেমনে। জওহরলাল নেহরু ক্ষমতায় বইস্যাই জয়প্রকাশ নারায়ণরে কইলেন, তোমরা অপজিশন পার্টি গইড়্যা তোল। শেখ সাহেব বললেন, আগামী ইলেশনে অপজিশন পার্টিগুলো ম্যাক্সিমাম পাঁচটার বেশি সিট পাইব না। আমি একটু আহত হইলাম, কইলাম, আপনে অপজিশনরে একশ সিট ছাইড়্যা দেবেন না? শেখ সাহেব হাসলেন। আমি চইল্যা আইলাম। ইতিহাস শেখ সাহেবরে স্টেটসম্যান অইবার একটা সুযোগ দিছিল। তিনি এইডা কামে লাগাইতে পারলেন না।’ পরবর্তীতে শেখ মুজিব নির্বাচনে কী করেছিলেন, তা অজানা নয়। নিজ প্রার্থীকে জেতানোর জন্য হেলিকপ্টারে করে ব্যালট বক্স নিয়ে আসার নজির স্থাপন করেছিলেন। পার্লামেন্টে বিরোধীদল বলতে কিছু ছিল না। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশে প্রথম জাতীয় নির্বাচন হয়েছিল। আওয়ামী লীগসহ ১৪টি দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ একাই পায় ২৯৩টি আসন। বিরোধীদলের মধ্যে জাসদ পায় ১টি, বাংলাদেশ জাতীয় লীগ পায় ১টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী পায় ৫টি আসন। অর্থাৎ বিরোধীদল জয়লাভ করে মাত্র দুটি আসনে।

শেখ মুজিব যে, বিরোধীদলকে ৫টি আসন দিতে চেয়েছিলেন, সেই কথাও তিনি রাখেননি। তারপর তো সবদল নিষিদ্ধ করে বাকশালই গঠন করে ফেলেন। ঠিক একইভাবে গত প্রায় ১৬ বছর ধরে স্বৈরচারী পিতার স্বৈর পথ অনুসরণ করেছেন শেখ হাসিনা। বিনাভোট, রাতের ভোট, ডামি ভোট করে ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠেন। ফলে তার পিতা ও তার পরিণতি অভিন্ন হয়েছে। পার্থক্য শুধু তার পিতাকে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে হয়েছে, আর তাকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে বাঁচতে হয়েছে। বলা বাহুল্য, শয়তান দুনিয়ার যে জায়গায়ই থাকুক না কেন, তার শয়তানি নিরন্তর চলতে থাকে। তার চেলাচামুন্ডা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত ও বিপদে ফেলে। শেখ হাসিনাও দুনিয়ার যে প্রান্তে থাকুক না কেন, তার শয়তানি কখনো বন্ধ হবে না। তার নজির তো দেশের মানুষ দেখছে। ছাত্র-জনতার বিপ্লব দমাতে শেখ হাসিনা যে দেড় হাজারের বেশি মানুষ হত্যা ও ত্রিশ হাজারের বেশি মানুষকে চিরতরে পঙ্গু ও অন্ধ করে দিয়েছে, তা নিয়ে তার মধ্যে বিন্দুমাত্র অনুশোচনা নেই। তার নেতাকর্মী ও দোসরদের মধ্যেও তার লেশমাত্র দেখা যায় না। বরং মানুষের উপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য শেখ হাসিনা যেমন একের পর এক ষড়যন্ত্রের জাল বুনে যাচ্ছেন, তেমনি তার চেলা ও দোসররা তা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে। ভারতে মোদির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে একের পর এক চক্রান্ত করে যাচ্ছে। সর্বশেষ ফাঁস হওয়া ফোন রেকর্ড দেশের মানুষ জানতে পেরেছে। তার আগে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিতে না নিতেই তাকে ফেলে দেয়া ও ব্যর্থ করে দিতে একের পর এক ষড়যন্ত্র করেছে। তার নেতাকর্মী ও দোসরদের দিয়ে জুডিশিয়ারি ক্যু, বিভিন্ন দাবিতে পুলিশ সদস্য ও জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের আন্দোলন, ১৫ আগস্ট রাজধানীতে ১০ লাখ লোকের সমাগম করে অচল করে দেয়া, আনসার বিদ্রোহ, হিন্দুদের দিয়ে আন্দোলনসহ সব ধরনের ষড়যন্ত্র করেছে।

এসব ষড়যন্ত্রে কাজ না হওয়ায় গত ১০ নভেম্বর জিরোপয়েন্টে নূর হোসেন চত্বরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছবি দিয়ে প্ল্যাকার্ড বানিয়ে গণজমায়েত করে এবং তা নিজেরাই ভেঙে ভিডিও করার নির্দেশ দিয়েছিলেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা। ফাঁস হওয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের এক গ্রুপ কলের রেকর্ড থেকে এমনও শোনা গেছে, ঐ দিন ঢাকায় ৩০ লাখ লোক এনে অবরুদ্ধ করে ক্যান্টনমেন্ট, বেসরকারি ব্র্যাক ও ইস্টার্ণ বিশ্ববিদ্যালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা জ্বালিয়ে এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির পরিকল্পনার কথা। আগেই বলেছি, আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিকভাবেই ভয়ংকর ষড়যন্ত্রকারী ও ধ্বংসাত্মক একটি রাজনৈতিক দল। তারা যে অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে আরও ভয়াবহ ষড়যন্ত্র করবে, তাতে সন্দেহ নেই।

তিন.
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, আগামী বছরের ২০ জানুয়ারি ডোনল্ড ট্রাম্প ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বাংলাদেশের জন্য কোনো সমস্যা ও সংকট সৃষ্টি হবে কিনা। স্বাভাবিকভাবে এ প্রশ্ন উত্থাপনের কোনো কারণ ছিল না। উত্থাপন করা হয়েছে এ কারণে যে, মোদির সাথে ট্রাম্পের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আছে। কারণ, ট্রাম্প যেমন কট্টরপন্থী, বর্ণবাদী মোদিও তেমনি। দুইয়ে দুইয়ে চার হয়ে যাওয়ার মতো। ফলে ট্রাম্প বিজয়ী হওয়ার পরপরই মোদি উচ্ছ্বসিত হয়ে তাকে প্রিয় বন্ধু সম্বোধন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ভাবখানা এমন, আমার দোস্ত চলে এসেছে, আর কোনো চিন্তা নাই। এবার হাসিনাকে দিয়ে বাংলাদেশ ও অন্তর্বর্তী সরকারকে শায়েস্তা করা যাবে। বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রকে বিরাগভাজন করা যাবে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ধারা ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কাঠামো সম্পর্কে যারা জানেন, তাদের এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। কারণ হচ্ছে, দেশটির গণতান্ত্রিক ভিত্তি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও পররাষ্ট্রনীতি এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যে, রাজা আসবে, রাজা যাবে, তাতে এসবের কোনো পরিবর্তন হবে না। অনেকটা মানুষের পোশাক বদলের মতো। মানুষ নতুন পোশাক পরে, পুরনো হয়ে গেলে তা পরিবর্তন করে, তবে মানুষটি ঠিক থেকে যায়। এতে পোশাকের ডিজাইনে নতুনত্ব আসলেও মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্টে পরিবর্তন খুব কম আসে। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে যেই আসুক না কেন, তাকে দেশটির গড়ে তোলা কাঠামোর মধ্যেই চলতে হয়। কারণ, তার রাষ্ট্রীয় প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো জনগণ ও রাষ্ট্রের কল্যাণমুখী করে গড়ে তোলা। আমাদের দেশের মতো ক্ষমতাসীনদের কল্যাণমুখী করে গড়ে নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প যতই কট্টরপন্থী হোন না কেন, তাকে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে গড়ে তোলা কাঠামোর মধ্যেই চলতে হবে। এখানে মোদির সাথে ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের কোনো মূল্যই নেই। বাংলাদেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের যে নীতি, ট্রাম্প আসার পরে তার আমূল পরিবর্তন হয়ে যাবে এবং ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশে ফিরে আসবে বলে তার দোসররা যে অতি আশা নিয়ে বসে আছে, তা যে হতাশায় পরিণত হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের মনে থাকার কথা, গত বছর নির্বাচনের আগে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র হাসিনা সরকারের উপর ভিসানীতিসহ নানা চাপ প্রয়োগ করেছিল। তাতে কি যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন ঠেকিয়ে রাখতে পেরেছিল? পারেনি।

বরং ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার মন্ত্রী-এমপিরা যুক্তরাষ্ট্রকে হেন কোনো গালমন্দ ছিল না, যা করেনি। সে সময়ের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে কী হয়রানিরই না শিকার হতে হয়েছে! তার আগে ড্যান মজিনাকে তো কাজের মেয়ে মর্জিনা বলে তিরস্কার করা হয়েছিল। বার্নিকাটের গাড়ি বহরে হামলা হয়েছিল। গত নির্বাচনের আগে হাসিনা তো বলেই দিয়েছিলেন, ২২ হাজার মাইল দূরের দেশে আমাদের যাওয়ার কোনো দরকার নেই। যুক্তরাষ্ট্র না হলেও আমাদের চলবে। পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, এখন সেই হাসিনাই যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ধর্ণা দিচ্ছে। দেখা গেছে, গত নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র কিছু একটা করে দেবে বলে যারা বুকভরা আশা নিয়ে বসেছিল, নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পর তাদের চরম হতাশ হতে হয়েছিল। ফলে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যদেশ আমাদের দেশে সরকার পরিবর্তন বা আন্দোলন করে দেবে, এ ভাবনা অবান্তর। যা করতে হবে, তা নিজেদেরই করতে হবে। এর জ্বলন্ত নজির ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। এখানে যুক্তরাষ্ট্রও কিছু করতে পারেনি, ভারতও তা ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। যা করেছে, তা আমাদের দেশের ছাত্র-জনতাই করেছে।

তারা জীবন দিয়ে, রক্ত ঝরিয়ে বিপ্লব করে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছে। এর অর্থ হচ্ছে, আমাদের পরিবর্তন আমাদেরকেই করতে হবে। বিদেশিরা এসে পরিবর্তন করে দেবে না। কাজেই, ফ্যাসিস্ট হাসিনা, মোদি ও ট্রাম্পের যোগসাজসে দেশে ফিরে আসবে বা অন্তর্বর্তী সরকারকে উল্টে দেবে বলে যে আশায় বুক বেঁধেছে, তা দূরাশা ছাড়া কিছুই নয়। তবে অন্তর্বর্তী সরকার ও জনগণকে অবশ্যই শয়তানের শয়তানি থেকে সতর্ক থাকতে হবে।

চার.
বিতাড়িত ফ্যাসিস্ট হাসিনা দেশের বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করার সুযোগ কিভাবে পায়? এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি। প্রায় ১৬ বছরে হাসিনা পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী, আদালত, জনপ্রশাসনসহ রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান দলীয়করণের মাধ্যমে নিজের ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছিলেন। পালিয়ে গেলেও এসব প্রতিষ্ঠানে তার দোসররা এখনো রয়ে গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান সংস্কার, ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের অপসারণ ও ফ্যাসিজম যাতে সৃষ্টি না হয়, সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ কাজ স্বল্প সময়ে করা অত্যন্ত কঠিন। ইতোমধ্যে পুলিশ ও জনপ্রশাসন সংস্কারের কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। তবে সেনাবাহিনীর সংস্কারের কাজটি পুরোপুরি হয়নি। তা নাহলে, হাসিনার সর্বশেষ ফাঁস হওয়া ফোনকলে বলতে পারত না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে তিনি সেনাবাহিনী দিয়ে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করবেন। এর অর্থ হচ্ছে, সেনাবাহিনীতে তার দোসররা এখনও রয়ে গেছে। দ্রুত এসব দোসরদের অপসারণ করা জরুরি। এ কথা ছাত্র-জনতাকে মনে রাখতে হবে, অন্তর্বর্তী সরকার যদি ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও মোদির যৌথ ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তে ব্যর্থ হয়, তাহলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বলে কিছু থাকবে না। তাই এ সরকারকে আগলে রেখে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করতে হবে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও মোদির ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় রুখে দাঁড়াতে হবে।

দেশের এই ক্রান্তিকালে অন্তর্বর্তী সরকার কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অনুধাবন করেই বারবার সতর্ক করে দিয়েছেন। এ সরকারকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না বলে সকলকে সতর্ক বার্তা দিচ্ছেন। তিনি দূরদর্শী চিন্তার পারদর্শী পরিচয় দিচ্ছেন। ফলে বিএনপির নেতাকর্মীদের তা উপলব্ধি করে জনগণকে সাথে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে আগলে রাখার জন্য অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করে যেতে হবে। শুধু বিএনপি নয়, ফ্যাসিস্ট হাসিনাবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকেও অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে। অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের উচিৎ দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করা। যত দেরি হবে, তত ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও মোদির ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত গতি পাবে। তাদের ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত মোকাবেলার উপযুক্ত শক্তি হচ্ছে, নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার।

ইনকলাব থেকে নেওয়া।

সোর্স: দৈনিক দিগন্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button