‘নাহিদ, আসিফ, মাহফুজের উচিত পদত্যাগ করে সরকারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা’
‘নাহিদ, আসিফ, মাহফুজের উচিত পদত্যাগ করে সরকারের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা’
আমি মনে করি নাহিদ, আসিফ, মাহফুজের উচিত হবে পদত্যাগ করে এই সরকারের সাথে সকল রকম সম্পর্ক ছিন্ন করা। এতটুকু পড়েই ভড়কে যাবেন না। কেন বলছি, সেটা না হয় ব্যাখ্যা করে নেই।
নাগরিক কমিটিকে আমার সম্পূর্ণ ডিস-ফাংশনাল মনে হচ্ছে। এরা গতকাল কিংবা পরশু একটা সংবাদ সম্মেলন করেছে। যারা কথা বলছিলো, এদের কথা বলার স্টাইলে না আছে কোন তেজ। না আছে কোনো সৌন্দর্য!
বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের প্লাটফর্মটা বরং এখনো ফাংশনাল। তবে কতদিন ফাংশনাল থাকবে, এ নিয়ে আমার অন্তত সন্দেহ আছে। কারণ গতকালই এরা অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে একটা বৈঠক করেছে।
সেই বৈঠকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের ঐক্যের ডাক দেয়া হয়েছে। এখন বিশ্লেষক হিসেবে আমার প্রশ্ন হচ্ছে- কেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্ররা নিজেরাই এ কাজ করতে পারল না? কেন অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের সাহায্য লাগছে?
খুবই পরিষ্কার ব্যাপারটা। বৈষম্য বিরোধী প্লাটফর্মটার শক্তিও অনেক খর্ব হয়ে গেছে। এখন আর আগের অবস্থায় নেই। ডাকলেই মানুষ ছুটে আসছে না। তোমরা কি এই প্রশ্ন নিজেদের করেছো- কেন ডাকলেই আর মানুষ আসছে না? যেই তোমাদের ডাকে লাখো-কোটি মানুষ রাস্তায় নেমেছিলো।
কারণ রাজনৈতিক দলগুলো নিশ্চিত করেছে, যাতে বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের প্লাটফর্মটা আর বাড়তে না পারে। তোমরা বুঝতেও পারো নাই।
ছেলেরা, এই যে তোমরা বিভিন্ন জায়গায় কমিটি দিচ্ছো। কেন দিচ্ছ? তোমরা আসলে ঠিক কোন ধরনের সংগঠন? রাজনৈতিক, সামাজিক নাকি সাংস্কৃতিক?
এতসব না করে, সোজা একটা রাজনৈতিক দল গঠন করো। যে রাজনৈতিক দলটা হবে বাংলাদেশে একটা মধ্যপন্থি রাজনৈতিক দল। যারা আমাদের দুই রাজনৈতিক দলের কাজকর্ম দেখে দেখে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। তাঁরা হয়ত তোমাদের সমর্থন দেবে।
আর এটা যদি তোমরা না করো। যত দিন যাবে। তোমরা আরো বেশি বিতর্কিত হবে। এখন যাদের সাথে তোমাদের চলাফেরা। তাঁরাই এ কাজ নিশ্চিত করবে।
কয়েকদশক ধরে লেখালেখি করছি তো। তোমরা যখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ো কিংবা তোমাদের অনেকের যখন জন্মও হয় নাই। তখনও আমরা লেখালেখিই করতাম। এরশাদ, আওয়ামী লীগ, বিএনপি সহ সকল আমলই দেখেছি। সে অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।
গত পরশু দেখলাম তোমাদের তৈরি করা নাগরিক কমিটির দুই জন বক্তব্য দিচ্ছে! কি যে বললো, ভালো করে বুঝতেও পারলাম না! তবে তাঁদের মূল কথা হচ্ছে- নির্বাচন কমিশনের সংস্কার না করেই কেন কমিশনের সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হলো? তাঁরা এই কমিশনকে প্রত্যাহার করেছে।
শুনে হাসছিলাম। একটা সরকারই তোমরা গঠন করেছো । এরা বিল্ডিং-এর নকশা করার আগেই বিল্ডিং দাঁড় করিয়ে ফেলেছে! এখন বলছে নকশা করা দরকার। সুতরাং বুঝতেই পারছো- এই কাঠামোর মাঝেই নির্বাচন হবে এবং সব কিছু হয়ে যাবে!
এরপর রাজনৈতিক দলগুলো তোমাদের এমন অবস্থা করবে! কোন দিকে যাবার পথ থাকবে না! তাই বলছি- এখনই একটা রাজনৈতিক দল করো। সে ক্ষেত্রে আসিফ, নাহিদ এবং মাহফুজ হয় ঘোষণা দিক- তাঁরা তোমাদের সাথে নেই। কিংবা ওরা পদত্যাগ করুন। তাছাড়া এমনিতেও তো এই সরকার বেশি দিন থাকবে না।
যদি আমাকে জিজ্ঞেস করো, আমি বলবো- ওদের উচিত পদত্যাগ করে সরকারের সাথে সকল সম্পর্ক ছিন্ন করা। সে ক্ষেত্রে তোমরা সবাই অন্যান্য ছাত্রদের কাতারে নেমে যাবে। তোমাদের জনপ্রিয়তার যে অবনমন দেখতে পাচ্ছি। সেটা কিছুটা হলেও ফিরে আসবে।
মনে রেখো- এখনও প্রশাসন তোমাদের কথা শুনছে। মিডিয়ায় তোমাদের কথা প্রচার করা হচ্ছে। আর কিছু দিন পর ওরা তোমাদের এমন অবস্থা করবে- তখন প্রশাসনও তোমাদের কথা শুনবে না। আর মিডিয়ায় বক্তব্য দিলেও সেটা প্রচার করবে না কিংবা করলেও এমন ভাবে করবে- কেউ সেটা দেখবেও না।
তাই যা সিদ্ধান্ত নেবার তাড়াতাড়ি নাও। এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।
লেখক: আমিনুল ইসলাম জ্যেষ্ঠ প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি।
সূত্র: dailycomillanews