বাংলাদেশ

গরু বিক্রির টাকায় চিকিৎসা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত মনিরুলের

গরু বিক্রির টাকায় চিকিৎসা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত মনিরুলের

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাবার আগে গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে শরীরে প্রায় শতাধিক ছররা বুলেটবিদ্ধ হন মাগুরা জেলার মো. মনিরুল। মাগুরা ভায়না মোড়ে আন্দোলনে অংশ নিয়ে ভায়না মোড় থেকে ডিসি কোর্টের দিকে যাওয়ার পথে পুলিশ এবং ছাত্রলীগ গুলি করেন। সেখানেই আহত হন কৃষক মনিরুল। এখনো শরীরের বিভিন্ন অংশে কয়েকটি বুলেট রয়েছে। ইতোমধ্যে হারিয়েছেন বাম চোখ। ডান চোখ নিয়েও আছেন শঙ্কায়।

আন্দোলনের আগে মনিরুল বছরে ২৫ মন ধানের বিনিময়ে ১ লক্ষ টাকা ধার করেন। সেই টাকায় ‍কৃষি জমিতে মরিচ এবং অন্যান্য ফসল চাষ করেন। কিন্তু আহত হওয়ার পর থেকে পরিচর্যার অভাবে সমস্ত ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। আন্দোলনে আহত হওয়ার পর দুটি এনজিও থেকে আরও ১ লক্ষ টাকা ধার করেন। আর্থিক সহায়তার জন্য ধারে ধারে ঘুরেও কোনো সহায়তা না পেয়ে এখন হতাশ তিনি। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার (০৩ ডিসেম্বর) চোখের চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে আসেন। কিন্তু কোনো কূল কিনারা না পেয়ে রাতে সিএমএইচের ট্রমা সেন্টার এন্ড বার্ন ইউনিটের ১ নং ওয়ার্ডের করিডরের বেঞ্চে ঘুমিয়ে থাকেন।

মনিরুল জানান, তিনি কারো হয়ে রাস্তায় দাড়াতে চান না। আন্দোলন করেছেন অধিকার আদায়ের জন্য। বিভিন্ন সমন্বয়কের কাছে গেলে তারাও কোনো আশ্বাস দিতে পারছেন না। মনিরুল বলেন, ‘যদি একটা ব্যানারেই বিক্রি হতে হয়, তাহলে আন্দোলন কেন করলাম? আমি চাই গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা হোক। সবাই ন্যায্য অধিকার ভোগ করুক। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। এটাই সবচেয়ে কষ্টের।’

আন্দোলন চলাকালে সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দে শ্রবণ শক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মনিরুলের। সেই সমস্যার পর এখন আগের মতো স্মৃতি শক্তিও ধরে রাখতে পারেন না। আক্ষেপ করে মনিরুল বলেন, ‘গরীবের আবার এত সমস্যা শোনার প্রয়োজন আছে কারো? গত রাতে এই বেঞ্চেই ঘুমিয়েছি। চিকিৎসার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু সাথে কেউ না থাকায় ডাক্তার ঔষধ লিখে দিয়ে বলেছেন, বাসায় গিয়ে নিয়মিত ঔষধ খেতে।’

আহত হওয়ার পর চিকিৎসা করাতে প্রথমে নিজের পালিত গাভী বিক্রি করে দেন। দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়েও তার দুশ্চিন্তার শেষ নেই। জানান, গত ৪ মাস থেকে দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছেন মনিরুল। আশপাশের কোন মানুষও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়নি। কারন তিনি কোনো দলের ব্যানারে গিয়ে দাঁড়ান না।

মনিরুল বলেন, ‘বড় ছেলেটা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। মেয়ের বয়স ৬ মাস। ঠিকমতো মায়ের বুকের দুধ পায় না, বাজার থেকে বাড়তি খাবার কেনার সামর্থ্য নেই। তাদের জন্য আলাদা খরচ আছে। গত ৪ মাস যাবৎ টিসিবির দেয়া ৩০ টাকা কেজির চাউলে সংসার চলছে। গরিবের কোন জায়গায় শান্তি নাই। আমার তো চোখ নষ্ট, পরিবার চালাবে কে?’

সূত্র: dailycomillanews

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button