পর পর দুই মেয়াদের বেশি কেউ প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবে না: তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপি ভবিষ্যতে এদেশে স্বৈরশাসনের কবর রচনা করতে চায়। আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য রাখতে চায়, রাষ্ট্র পরিচালনায় সমাজের জ্ঞানী-গুণীদের প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে দুই কক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা প্রবর্তন করতে চায়।
দেশে আর কোনোদিন কেউ যাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে স্বৈরাচারী না হয়ে উঠতে পারে- সেটা নিশ্চিত করতে বিএনপি সংবিধানে এমন ব্যবস্থা রাখতে চায় যাতে, কেউ যেন পর পর দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে না পারে।
রোববার কুমিল্লা ও ফরিদপুরের নেতাকর্মীদের মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দেশব্যাপী তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে ধারাবাহিক এই সভা করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
গণভবনের জায়গায় গণহত্যা মিউজিয়াম তৈরির ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ রবিবার বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় তারেক রহমান এই ঘোষণা দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ষড়যন্ত্র কিংবা অপপ্রচার চালিয়ে গত ১৫ বছরের অনাচার অবিচার জনগণকে ভুলিয়ে দেওয়া যাবে না। রাষ্ট্রীয় স্থাপনা গণভবন ছিল বা দেশের রাষ্ট্র ও রাজনীতির ঐতিহ্যবাহী স্মারক। গণভবন বা বর্তমানে স্বৈরাচারী হাসিনার দুর্নীতি দুঃশাসন, অনাচার, অপকর্মের প্রতীক। ইতোমধ্যেই বিভিন্নমহল থেকে এই গণভবনকে গুম খুন অপহরণ এবং গণহত্যার মিউজিয়াম হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি উঠেছে।
তারেক রহমান আরও বলেন, ২০০৯ সালের পিলখানায় সেনাহত্যা থেকে শুরু করে ২০১৩ সালের শাপলা চত্ত্বর হত্যাকাণ্ড, ২০১২, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৮, ২০২২ এবং ২০২৩ সালে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনের সময় গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ২০১৮ সালের কোটাবিরোধী এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ২০২৪ সালে গণঅভুত্থানে শহীদ এবং গুম হওয়া মানুষদের স্মৃতিগুলো এই মিউজিয়ামে সংরক্ষিত থাকবে। অবৈধ ক্ষমতায় থাকার জন্য বাংলাদেশে আর কোনো শাসক যাতে স্বৈরাচারী হাসিনার মতো বর্বরোচিত পথ অনুসরণ না করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে এই মিউজিয়াম সেই বার্তাই বহন করবে।
বিএনপির রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কারের পরিকল্পনা এবং গত বছর জুলাইয়ে উপস্থাপিত ৩১ দফা কর্মসূচির মৌলিক বিষয়গুলো তুলে ধরে তারেক রহমান বলেন, বিএনপি তরুণ ও বেকারদের জন্য কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে চায়, কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত যোগ্যতা অনুযায়ী ভাতা প্রবর্তন করতে চায়, নিশ্চিত করতে চায় সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ।
স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি এবং অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রে আনতে চায় যুগোপযোগী আমূল পরিবর্তন। গড়তে চায় ধর্ম-বর্ণ, গোত্র-গোষ্ঠী, সমতল পাহাড়ি নির্বিশেষে এক সুষম সমঅধিকারের আধুনিক বাংলাদেশ। দলের সকল নেতাকর্মীদের এই বার্তা জনগণের দোর গোড়ায় পৌঁছানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশায় যুক্ত হয়েছে নতুন আশাবাদ আর পরিবর্তিত হয়েছে ভাষা। এই পরিবর্তিত নতুন ভাষা পড়তে ও বুঝতে হবে, আর আশাবাদকে বাস্তবে রূপ দিতে হবে- সেটা না পারলে ছিটকে পড়তে হবে। এতদিন শুধু আওয়ামী লীগ ছিল প্রকাশ্য প্রতিপক্ষ।
আমরা তাদের আক্রমণের ধরন বুঝতাম ও জানতাম। এখন ওরা ছাড়াও চারিদিকে অসংখ্য অদৃশ্য প্রতিপক্ষ, এদের অবস্থান অন্ধকারে, এরা সর্বত্র। তাই সতর্ক থাকতে হবে এই দৃশ্যমান আর অদৃশ্য প্রতিপক্ষ মোকাবিলায়।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সফলতা আর জনপ্রিয়তার একমাত্র ভিত্তি ছিল দেশের সর্বস্তরের মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা। এদেশের মানুষের প্রাণঢালা ভালোবাসা আর আস্থাই বিএনপির একমাত্র শক্তি।
জনগণের এই প্রতিষ্ঠিত ভালোবাসাকে যে কোন মূল্যে রক্ষা করতে হবে, কোনোভাবেই এটা বিনষ্ট করা যাবে না। কেউ যদি কোন অপচেষ্টায় লিপ্ত হয় তাহলে সে যত বড়ই হোক, দল তাকে বিন্দুমাত্র প্রশ্রয় দেবে না।
বিএনপি পরিবার ঐক্যবদ্ধ থাকলে যে কোন ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে অতীতের মত আবারও দল হিসাবে সফল হবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারেক রহমান।