বাংলাদেশ

কিভাবে হত্যা করা হয় মুগ্ধকে, ৪ মিনিটের ভিডিও প্রকাশ

কিভাবে হত্যা করা হয় মুগ্ধকে, ৪ মিনিটের ভিডিও প্রকাশ

পানি লাগবে কারও? পানি, পানি—বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গত ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরা আজমপুর এলাকায় ক্লান্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে পানি বিতরণ করছিলেন মীর মাহফুজুর রহমান (মুগ্ধ)। এর কিছুক্ষণ পর আজমপুরের সড়কে তার গুলিবিদ্ধ দেহ পড়ে ছিল। পাশেই ছিল পানির কেস (কয়েকটি পানির বোতলের প্যাকেট)।

মুগ্ধ হত্যার বিচার চেয়ে তার পরিবার বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দাখিল করে।

পরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মুগ্ধর ভাই মীর মাহমুদুর রহমান (দীপ্ত) এবং মীর মাহবুবুর রহমান (স্নিগ্ধ)। এর মধ্যে মুগ্ধের যমজ ভাই স্নিগ্ধ। আর দীপ্ত মুগ্ধর বড় ভাই। এ সময় মীর মাহমুদুর রহমান তার ছোটো ভাই মীর মুগ্ধকে হত্যার ঘটনার ৪ মিনিটের একটি ভিডিও প্রকাশ করেন।

মুগ্ধর বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান বলেন, পুলিশের গুলিতেই মুগ্ধর মৃত্যু হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ এবং অন্যান্য তথ্য–প্রমাণের ভিত্তিতে তারা এটা নিশ্চিত হয়েছেন। এখন কোন পুলিশ সদস্যের গুলিতে মুগ্ধর মৃত্যু হয়েছে, এই হত্যার ঘটনায় কে বা কারা নির্দেশ দিয়েছেন, এগুলো বের করার দায়িত্ব সরকারের। হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব।

তবে মুগ্ধর পরিবার লিখিত অভিযোগে কারও নাম উল্লেখ করেনি। এ বিষয়ে মুগ্ধর ভাই মীর মাহমুদুর রহমান বলেন, অভিযোগে পুরো ঘটনার বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। সেখানে কারও নাম উল্লেখ করেননি। তদন্তে প্রমাণসহ যে নামগুলো ক্রমে আসবে, সেগুলো তদন্ত সংস্থা যুক্ত করবে। যেমন প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার কে করেছে, কে বা কারা সেটি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে, হত্যার নির্দেশদাতা কে, এগুলো প্রমাণসহ আসা উচিত। সেটি প্রশাসন ও সরকার হয়তো খুঁজে বের করবে।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হত্যার নির্দেশদাতা হিসেবে ‘সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি’ (ঊর্ধ্বতন কর্তৃত্বের দায়) হিসেবে শেখ হাসিনার নাম এসেছে। তাহলে কাউকে আসামি করা হয়নি কেন, একজন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে মীর মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘বিভিন্ন হত্যার নির্দেশদাতা তিনি (শেখ হাসিনা) সবাই জানি।…এভিডেন্সগুলো তো (প্রমাণ) লাগবে। এভিডেন্স ছাড়া আমরা যদি সেই জায়গায় যাই, তবে বিচারপ্রক্রিয়া আরও বাধাগ্রস্ত হবে। আমরা চাই না বিচারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হোক। আমরা ন্যায়বিচার চাই। সে জন্য কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।’

মীর মাহমুদুর রহমান জানান, ছয় মাস ধরে তারা চেষ্টা করেছেন যতটুকু সম্ভব হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে প্রমাণ সংগ্রহ করা। নিজেদের উদ্যোগে সংগ্রহ করা এসব প্রমাণের ভিত্তিতেই ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

মুগ্ধর পরিবারের পক্ষ থেকে সংগ্রহ করা ভিডিও ফুটেজ ও ছবি নিয়ে তৈরি একটি তথ্যচিত্র সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে। সেই তথ্যচিত্রের শুরুতে মুগ্ধকে নিয়ে ‘ভাইরাল’ (অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া) হওয়া একটি ভিডিও রয়েছে। সেখানে মুগ্ধকে বলতে শোনা যায়, ‘ভাই পানি লাগবে কারও, পানি।’

১৮ জুলাই গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর মুগ্ধর নিথর দেহের পাশে পানির বোতলের কেস পড়ে ছিল। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ছবি ও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়লে মানুষের মধ্যে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়। ছাত্র–জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়।

বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) শিক্ষার্থী ছিলেন মুগ্ধ। তাকে গুলি করে হত্যার ভিডিও ফুটেজ আছে বলে জানান বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘যিনি গুলি করেছেন তার চেহারা অস্পষ্ট। এটা ফরেনসিক করলেই খুব সহজে বের করা সম্ভব। এখন এই কাজটুকু অ্যাটলিস্ট (অন্ততপক্ষে) এই সরকারের কাছ থেকে আশা করতে পারি।

ঘটনাস্থলের আশেপাশের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে ৪ মিনিটের একটি ভিডিও তৈরি করেছেন মুগ্ধর ভাইয়েরা। তার বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘গুলি করার আগে সেখানে একটা বডি নিয়ে এসেছিল পুলিশ। একটা বডি দিতে এসে আরেকটা বডি ফেলে দিয়ে গেছে। গুলি করার সাথে সাথে মুগ্ধ পড়ে যায়, হাতে সেই পানির বোতল আর বিস্কুটের পলিথিন ধরা। রাস্তায় তার মগজ বের হয়ে পড়ে থাকে।’

হাসপাতালে নেওয়ার পরের ফুটেজ দেখিয়ে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘কপালে যেখানে টিপ পরে মেয়েরা ঠিক সেখানে গুলিবিদ্ধ হয় মুগ্ধ। খুব ছোট একটি ছিদ্র।’

তিনি বলেন, ‘ফুটেজ কালেক্ট (সংগ্রহ) করার দায়িত্ব আমাদের ছিল না, প্রশাসনের ছিল। তারপরও নিজেদের উদ্যোগে এটা আমরা করেছি। এখন ফরেনসিকের মাধ্যমে চেহারাগুলো ক্লিয়ার (স্পষ্ট) করে একজন একজন করে নিয়ে এসে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আশা করতে পারি। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা।’

সূত্র: dailycomillanews

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button