ভোল পাল্টে ছাত্রদলে ভিড়ছে ববির ছাত্রলীগ কর্মীরা

নিজেদের পিঠ বাঁচাতে ছাত্রদলে ভিড়ছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী কর্মীরা। গত ১ অক্টোবর বরিশালে সাংগঠনিক সফরে আসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির। এ সময় ‘রাজনীতিবিমুখ’ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তিনি। সেখানে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা যায় একাধিক ছাত্রলীগ কর্মীদের।
কয়েকটি ছবি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিগত দিনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অন্তত ১০ ছাত্রলীগ কর্মী সেখানে ছাত্রদলের সঙ্গে উপস্থিত ছিল। তারমধ্যে একজন ছিল মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্মলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক। অনেকে নৌকা মার্কার প্রার্থী নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করেছিল। তাদের (ছাত্রলীগ) কয়েকজনের নাম পরিচয় জানা গেলেও, বাকিদের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে বিগত দিনের ছাত্রলীগের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে দেখা গেছে তাদের। ছাত্রলীগের বিভিন্ন প্রোগ্রামের ছবি ও বর্তমানে ছাত্রদলের সঙ্গে তোলা ছবি মিল করে এর সত্যতা পাওয়া গেছে। যা প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।
এর আগে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সঙ্গে চায়ের আড্ডা কিংবা নিজেদের আলাপচারিতায়ও তাদের (ছাত্রলীগ) দেখা মিলেছে। বরিশাল শহরে তাদের অনুষ্ঠানগুলোতে অংশগ্রহণ করে থাকে ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী কর্মীরা। অথচ এক সময়ে তারা (ছাত্রলীগ) বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছিল।
একাধিক সূত্র বলছে, বিগত দিনে এদের অনেকে ছাত্রলীগ নেতার ছত্রছায়ায় ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছে। যাদের ছত্রছায়ায় রাজনীতি করত, তারা বিভিন্ন হামলা-মামলায় জড়িত। তাই, তাদের অনেকে নিজেদের পিঠ বাঁচাতে ছাত্রদলের সঙ্গে রাজনীতি করতে যোগ দিচ্ছে। যাতে ভবিষ্যতে তারা নিজেদের সুবিধা নিতে পারে। ছাত্রদলে এসে যারা পরিচয় দিচ্ছে তারা আসলেই সুবিধাবাদী ছিল। নানান অপকর্মের সঙ্গে জড়িত ছাত্রলীগের নানা অংশের সঙ্গে সখ্যতাও ছিল তাদের। তারাই আসলে ছাত্রদলের সংগঠনকে বিতর্কিত করে প্রভাব খাটাতে চায়। তাছাড়া ববি ছাত্রদলের বাইরের অংশও প্রতিপত্তি ধরে রাখার জন্য ছাত্রলীগের কর্মীদের ব্যবহার করছে।
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি রেজা শরীফ কালবেলাকে জানান, যারা ৫ আগস্টের আগে ছাত্রলীগের বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেছে তারা কোনোভাবেই ছাত্রদলে জায়গা পাবে না। আমাদের জানা মতে ছাত্রলীগের কেউ থাকলে আমরা তাদের মানা করে দিচ্ছি। ছাত্রদলের কোনো সক্রিয় কর্মীর হাত ধরে ছাত্রলীগ থেকে ছাত্রদলে আসার সুযোগ নেই।
ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি বন্ধে তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমের বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে আমরা সাংগঠনিক কার্যক্রম করছি না। কোনো ব্যানার ব্যবহার করছি না। আমরা নিয়ম মেনে ক্যাম্পাসের বাইরে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে নিচ্ছি। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্য সংগঠনেরও সাংগঠনিক কাঠামো রয়েছে।
ববি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আল হাসিব কালবেলাকে জানান, অনুপ্রবেশকারীর বিষয়টি নিয়ে আমরা শঙ্কিত। যখনি দেখেছি বিগত দিনে যারা সক্রিয় ছাত্রলীগ করেছে, তাদেরকে আমরা বাদ দিয়েছি। ইতোমধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম লীগের পদধারী একজনকে চিহ্নিত করে আমাদের সাংগঠনিক কাজে আসতে মানা করা হয়েছে। এমন আর কেউ থাকলে তাদেরকেও চিহ্নিত করতে পারলে তাদেরকেও ভিড়তে দেওয়া হবে না। ছাত্রদল ছাড়া ভিন্ন মতাদর্শের কাউকেই অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
ছাত্রদলের কর্মীরাই ছাত্রদলীগকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগের কথা জানালে তিনি জানান, ছাত্রলীগকে প্রশ্রয় দিচ্ছে আসলেই তারা কারা? আমরা তাদেরকে চিনি না। যারা এখন সুশীল দাবি করেছে অথচ আগে ছাত্রলীগ করতো তারা কোনোভাবেই ছাত্রদল করতে পারবে না। তবে ববি ছাত্রদলের বাইরে কেউ স্বার্থ উদ্ধার ও প্রভাব বিস্তারের জন্য ছাত্রলীগকে প্রশ্রয় দিতে পারে। তবে আমরা এ ব্যাপারে সজাগ আছি।
গত ১১ আগস্ট থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সিন্ডিকেটের ৮৫তম (বিশেষ) সভার সিদ্ধান্তে এ আদেশ কার্যকর করা হয়। তবে ক্যাম্পাসে ছাত্রদল সরাসরি রাজনীতি না করলেও অভ্যন্তরে চলছে তাদের কার্যক্রম। শুধু ছাত্রদল নয়, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক কাঠামো রয়েছে বলে জানা যায়। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ থাকার কারণে এসব রাজনৈতিক সংগঠন প্রকাশ্যে আসেনি। গত কয়েকদিন ধরে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বেশ সক্রিয় হতে দেখা গেছে। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে একসঙ্গে আড্ডা দিতেও দেখা যায় তাদের। তবে সেই আড্ডায় দেখা যায় বিগত দিনের ছাত্রলীগ পরিচয়দানকারী নেতাকর্মীদেরও।
সোর্স: দৈনিক দিগন্ত