দিল্লী থেকে ষড়যন্ত্র করছেন সাবেক স্বৈরাচারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

ডেস্ক রিপোর্ট: আওয়ামী লীগকে আবারও সক্রিয় করতে চাচ্ছেন দলটির সভাপতি সদ্য পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে পালিয়ে বর্তমানে ভারতে অবস্থান করা শেখ হাসিনা নিজেই দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন। তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনেরও আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে এক খোলা চিঠিতে শেখ হাসিনা দলীয় নেতাকর্মীদের মনোবল না হারানোর আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আওয়ামী লীগ আবারও ঘুরে দাঁড়াবে। তিনি শিগগিরই দেশে ফিরবেন বলেও উল্লেখ করেন। যদিও ফ্যাক্ট চেকিং এ এই চিঠিটি মিথ্যা বলে প্রমাণ হয়েছে। আওয়ামীলীগের সংসদ সদস্যের অনলাইন পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউন এই নিউজ প্রকাশ করে।
কোটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জের ধরে জনরোষে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগের পরপরই হেলিকপ্টারযোগে প্রথমে ভারতের আগরতলা ও পরে বিমানযোগে দিল্লিতে যান।
দলীয় সভাপতির এভাবে চলে যাওয়ার খবর প্রচারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়ে যায় দৃশ্যপট। দলের নেতাকর্মীরা চলে যান আত্মগোপনে। এ সময় দুষ্কৃতকারীরা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমন্ডিতে দলীয় সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় এবং তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ সারা দেশের দলীয় কার্যালয়গুলোতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেয়। হামলা, লুটপাট, আগুন থেকে রক্ষা পায়নি ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘরও। দলের নেতাকর্মীদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাট করা হয়। দখল করে নেওয়া হয় তাদের অনেকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলের সিনিয়র কিছু নেতা পরিস্থিতি বুঝে শেখ হাসিনার পদত্যাগের আগে ও পরে দেশ ছেড়ে গেলেও বড় অংশই দেশের ভেতরে রয়ে গেছেন। শেখ হাসিনার হঠাৎ চলে যাওয়ার কারণে দেশ ছাড়তে না পেরে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশিরভাগ নেতাকর্মী দেশেই গাঢাকা দিয়েছেন। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অনেকে রাজধানীর বাসা বা গ্রামের বাড়ি বাদ দিয়ে দূরবর্তী কোনও নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউ কেউ স্ত্রী-সন্তানকে কোনও আত্মীয়ের বাসায় রেখে নিজে যাযাবরের মতো বারবার স্থান পরিবর্তন করছেন।
এদিকে দিল্লিতে অবস্থান করা শেখ হাসিনা এখনও মুখ না খুললেও দেশবাসীর উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। চিঠিটিতে তারিখ ৭ আগস্ট উল্লেখ থাকলেও রবিবার (১১ আগস্ট) একাধিক ভারতীয় গণমাধ্যমে এটি প্রকাশিত হয়েছে।
অপরদিকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে কথা বলছেন। তিনি জানিয়েছেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হলে এবং অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিলে শেখ হাসিনা দেশে ফিরবেন। দলের এই দুঃসময়ে তিনি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মনোবল না হারানোর আহ্বান জানাচ্ছেন। দরকার হলে বঙ্গবন্ধুর নাতি হিসেবে তিনি নিজেও আওয়ামী লীগের পাশে থাকবেন বলেও আশ্বাস দিচ্ছেন।
বাংলাদেশে অবস্থানরত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দিল্লিতে অবস্থানের তৃতীয় দিন (৭ আগস্ট) থেকেই শেখ হাসিনা নিজেই দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন মাধ্যমে টেলিফোন করে দলের নিম্ন থেকে উচ্চ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছেন। তাদের তিনি পদত্যাগ করার প্রেক্ষাপট জানাচ্ছেন। তিনি না গেলে দেশে আরও রক্তপাত হতো বলে এসব নেতাকে জানিয়েছেন বলে শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন—এমন নেতারা ও তাদের ঘনিষ্ঠজনেরা বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে কম বিতর্ক রয়েছে এবং দলের জন্য আপসহীন, শেখ হাসিনা তাদের সঙ্গে বেশি যোগাযোগ করছেন। তিনি নারীনেত্রীদের সঙ্গেই বেশি কথা বলেছেন বলে তারা জানিয়েছেন। এছাড়া যারা বিদেশ চলে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন, তাদেরও কারও কারও সঙ্গে কথা বলেছেন।
যাদের সঙ্গে কথা হয়েছে তাদের কয়েকজন বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, নেতাকর্মীদের অনেকটা অরক্ষিত রেখে এভাবে চলে যাওয়ার কারণে তিনি মনোকষ্ট পেয়েছেন। তবে তার কিছু করার ছিল না বলেও দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন—তিনি নেতাকর্মীদের সেফটির জন্য একদিন সময় চাইলেও তাকে সেটা দেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা হয়েছে এমন একাধিক নেতা আরও জানান, দলীয় কার্যালয় এবং দলের নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে আগুন ও ভাঙচুরের জন্য তিনি মনোক্ষুণ্ন হয়েছেন। বিশেষ করে পিতার স্মৃতিজড়িত ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার কারণে খুবই কষ্ট পেয়েছেন।
পরিস্থিতির কারণে শেখ হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হলেও তিনি আবারও ফিরে আসবেন বলে নেতাদের জানিয়েছেন। তিনি সবাইকে যার যার জায়গা থেকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান। তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে দলীয় কার্যালয়গুলো দখলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি হামলার শিকার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়াতেও নির্দেশ দিয়েছেন। জানা গেছে, দলীয় সভাপতির সঙ্গে কথা বলার পর নেতাকর্মীদের মনে বেশ সাহস এসেছে। তারা আত্মগোপনে থাকা অন্য নেতাদের সঙ্গে কথা বলে দলীয় প্রধানের বার্তা পৌঁছে দিচ্ছেন।
এছাড়া শেখ হাসিনা আগামী ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি ওই দিন সবাই ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে বলেছেন। শেখ হাসিনার বার্তা পেয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা শোক দিবস নিয়ে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিতে শুরু করেছেন। যুব মহিলা লীগসহ কয়েকটি সংগঠন ১৫ আগস্ট ৩২ নম্বরে শোকের কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
এদিকে শেখ হাসিনা ভারতে যাওয়ার পরদিনই তার নির্বাচনি এলাকা গোপালগঞ্জের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল করেছেন। তারা শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার শপথ নিয়েছেন। গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জি এম সাহাবুদ্দিন আজম দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলেছেন বলে এক ফেসবুক লাইভে জানিয়েছেন।