ভারতের বাঁধ খুলে দেওয়ার পানিতে ডুবছে গ্রামের পর গ্রাম
ভারতের বাঁধভাঙা পানি, পাহাড়ি ঢল ও টানা ভারি বর্ষণে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কক্সবাজার ও পার্বত্য অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ডুবছে গ্রামের পর গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে হাজার হাজার পরিবার।
ফেনীর অনেক বাড়ির পুরো নিচতলাই তলিয়ে আছে। বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন বাসিন্দারা। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ নেই, নেই মোবাইল ও ইন্টারনেট সংযোগ। ফলে তারা স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। ফেনীর মুহুরী নদীর পানি গত চল্লিশ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। পানির তীব্র স্রোত এবং নৌকাসহ বিভিন্ন সরঞ্জামের অভাবে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হচ্ছে। চুলা জ্বলছে না তাই অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন অনেকে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবীরা ত্রাণ তৎপরতা শুরু করলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে অভিযোগ বানভাসিদের। এদিকে কক্সবাজারের রামুতে বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২ জন নিখোঁজ রয়েছে। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে ডুবে মারা গেছেন এক বৃদ্ধ। রেলপথ ডুবে যাওয়ায় ঢাকার সঙ্গে সিলেট ও চট্টগ্রামের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
ফেনী : ফেনীতে লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দি ও বিদ্যুৎহীন রয়েছে। বৃহস্পতিবার জেলার ফুলগাজী, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও সদর উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও ব্যাংক লেনদেন বন্ধ ছিল। ফেনীর মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙন দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকে ডুবছে গ্রামের পর গ্রাম। বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হওয়ায় জেলার সাত লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বন্যাদুর্গত মানুষজন চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। চার উপজেলায় তলিয়ে গেছে মৎস্য খামার, পোলট্রি খামার ও ডেইরি খামার।
জানা গেছে, বন্যার পানিতে লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গত সোমবার রাত থেকে পরশুরাম, ফুলগাজী ও ছাগলনাইয়া উপজেলার প্রায় বেশির ভাগ এলাকা বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় মঙ্গলবার থেকে এ তিন উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ভারি বৃষ্টিতে ফেনী শহরে জলাবদ্ধতার কারণে বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাত অবধি বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পরশুরামের সাতকুচিয়া এলাকার বাসিন্দা আবদুর রহমান বলেন, ঘরবাড়ি সব ডুবে গেছে। পানির তীব্র স্রোতের কারণে ঠিকভাবে উদ্ধারকাজও করতে পারছেন না। এর মধ্যে বিদ্যুৎ, মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় আরও দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ফেনী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার হাওলাদার ফজলুর রহমান বলেন, জেলায় চার লাখ গ্রাহকের মধ্যে তিন লাখের বেশি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছেন। ভারি বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সোনাগাজী ও দাগনভূঞা উপজেলায় বিদ্যুৎ সংযোগ স্বাভাবিক ছিল। ফেনী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বলেন, আমাদের প্রায় ৭০ শতাংশ গ্রাহক বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন রয়েছে। বন্যার পানি কমার আগে সংযোগ স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরের দিকে বন্যাকবলিত এলাকায় আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে স্পিডবোট নিয়ে কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। একই সঙ্গে বিজিবি সদস্য, কোস্টগার্ড ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক পরিবারের শত শত স্বেচ্ছাসেবক দিনব্যাপী উদ্ধার অভিযান পরিচালনা ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করছেন। ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কসহ স্থানীয় সব গ্রামীণ সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফেনীর জেলা প্রশাসক শাহীনা আক্তার বলেন, বন্যায় আটকে পড়া লোকদের উদ্ধারকাজ চলছে। উদ্ধারকৃতদের নিরাপদ আশ্রয়ে রাখা হচ্ছে।
এদিকে বিএনপি, জামায়াত, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষ থেকে আটকে পড়াদের উদ্ধারে ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও খাদ্য সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর অংশ বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় উদ্ধারকারী স্বেচ্ছাসেবীরা যানজটের কবলে পড়েছেন। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন খাদ্য সহায়তাকারী ও উদ্ধারকারীরা। পানিতে আটকে পড়াদের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। বৃহস্পতিবার সকালে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ফেনীতে বন্যাকবলিত এলাকার কিছু অংশ পরিদর্শন করে খাদ্য সহায়তা প্রদান করেন।
নোয়াখালী, সোনাইমুড়ি, চাটখিল, কোম্পানীগঞ্জ : ভারি বৃষ্টি ও ঢলে ফেনীর মুহুরী নদীর পানি বেড়ে নোয়াখালীতে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। এতে ২৫ লাখ মানুষ পানিবন্দি ও সাড়ে ৪ লাখ পরিবার বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে অন্ধকারে রয়েছেন। গ্রামীণ সড়কে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। চরম দুর্ভোগ ও আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। জেলার আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ৩৬ হাজার মানুষ দুদিন ধরে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। এ আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে জরুরি ভিওিতে খাদ্য, শিশুখাদ্য ও পানি সরবরাহ না করলে পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে নোয়াখালী জেলার প্রশাসক কার্যালয়ে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয়রা জানান, টানা বৃষ্টিতে জেলা শহর মাইজদীসহ আট উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। ফেনী জেলার মুহুরী নদীর পানিতে নোয়াখালীর সেনবাগ, বেগমগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও কবিরহাট উপজেলা তলিয়ে গিয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। খালগুলো অবৈধভাবে দখল ও পৌর এলাকায় ড্রেনগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করায় পানি নামতে পারছে না। টানা বৃষ্টিতে মাইজদীসহ আট উপজেলার বেশির ভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। খালগুলো অবৈধভাবে দখল ও পৌর এলাকায় ড্রেনগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না করায় জলাবদ্ধতায় বেশি ক্ষতি হয়েছে। জেলা আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চমান পর্যবেক্ষক আরজুল ইসলাম জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নোয়াখালীতে ১৪৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সক্রিয় লঘুচাপ ও মৌসুমি জলবায়ুর কারণে জেলায় আরও তিন দিন ভারি বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার মো. জাকির হোসেন বলেন, জেলায় সাত লাখ ৭৫ হাজার গ্রাহকের মধ্যে সাড়ে ৪ লাখ গ্রাহকের বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন। ভারি বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বেগমগঞ্জের একটি উপকেন্দ্রে পানি উঠে গেছে। জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, নোয়াখালীর নয়টি উপজেলার মধ্যে আটটি উপজেলায় বন্যা হয়েছে। ৩৮৮ আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৩৬ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। প্রায় ২০ লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। আমরা শুকনো খাবার দেওয়ার চেষ্টা করছি। উপজেলার কর্মকর্তারা মাঠে কাজ করছেন। স্বেচ্ছাসেবকরা কাজ করছেন। আমরা বিত্তশালী মানুষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। প্রশাসন ও সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে নগদ টাকা ও চাল বিতরণ করা হয়েছে। তবে এ রিপোর্ট লেখার সময় বিকাল ৪টায় কোনো আশ্রয়কেন্দ্রে খাদ্য সরবরাহ করা বা কোনো মেডিকেল টিম দেখা যায়নি। সোনাইমুড়ীতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ মানুষ। ভেসে গেছে কয়েকশ মাছের প্রজেক্ট, মুরগি খামার, আমনের বীজতলা, শাকসবজি খেত এবং ঝড়ো বাতাসে ভেঙে গেছে গাছপালা। বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ায় বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে কয়েকটি এলাকা। সিলিন্ডার গ্যাসের দাম অনেক বেড়ে গেছে। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন। চাটখিলের শাহপুর, রামনারায়ণপুর, পরকোট, বদলকোট, মোহাম্মদপুর, নয়খলা, হাটপুকুরিয়াসহ সব ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। উপজেলার ৮০ ভাগ মাছের খামার তলিয়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে ১৬ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কোম্পানীগঞ্জের মুসাপুর ইউনিয়নের নূর উদ্দিন জানান, বন্যার পানিতে গত মঙ্গলবার তার একটি মুরগির খামারে প্রায় ১০ লাখ টাকার মুরগি মারা গেছে। এছাড়া বাংলাবাজারসহ আশপাশের অনেক খামারির মুরগি বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এসএইচবিও, সাইবার ওয়ারিয়র্স, স্বপ্নসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন।
লক্ষ্মীপুর, রামগতি, কমলনগর, রায়পুর : প্রায় ৬ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে আছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয়দের সহযোগিতায় খালের অবৈধ বাঁধ অপসারণ করছে উপজেলা প্রশাসন। পানিবন্দিদের জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনো খাবার বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বৃহস্পতিবার বলেন, সদর, রামগতি, কমলনগর, রায়পুর ও রামগঞ্জের সর্বত্র জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ১৮৯টি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত রয়েছে। ডিসি বলেন, লক্ষ্মীপুরের খালগুলোতে অবৈধভাবে বাঁধ দিয়ে দখল করে রেখেছে প্রভাবশালীরা। এতে পানি নামতে পারছে না। জনগণ আমাদের এ ব্যাপারে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছে। প্রশাসনের উপস্থিতি ও জনগণের সহযোগিতায় অবৈধ বাধগুলো কেটে দেওয়া হচ্ছে। পানিবন্দি মানুষের সহায়তায় কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, নদীতে ভাটা আসায় জলাবদ্ধতা নিরসনে সবগুলো স্লুইসগেট খুলে দেওয়া হয়েছে। জোয়ারের সময় গেটগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে। রামগতি ও কমলনগর উপজেলার ৪০ গ্রামের প্রায় ৪ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ ফুটের বেশি পানি বেড়েছে। মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রামগতির চর আলেকজান্ডার, চর গাজী, পোড়াগাছা, চর রমিজ, বড়খেরী, চর আবদুল্লাহ ও চর বাদাম ইউনিয়নসহ উপজেলার প্রায় সব গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। কমলনগর উপজেলার চর ফলকন, চর জাঙ্গালীয়া, চর কালকিনি, চর মার্টিন, চর লরেন্স, সাহেবের হাট, তোরাবগঞ্জ, চর কাদিরা ও পাটারিরহাট ইউনিয়ন এখন পানির নিচে। রায়পুরে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ২০ হাজারের বেশি পরিবার। ফসল, পানের বরজ, ২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডুবে গেছে। পুকুরের মাছ চলে গেছে। বুধবার ইউএনও ইমরান খানের সভাপতিত্বে ছাত্র সংগঠন, সামাজিক সংগঠন ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সদস্যদের নিয়ে জরুরি সভা হয়। সংগঠনের নেতারা রায়পুরের ডাকাতিয়া নদী ও ইউনিয়নে খালের বাঁধগুলো খুলে দেওয়ার জন্য ইউএনওর প্রতি আহবান জানান।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া : উজানের পানিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার হাওড়া নদীর বাঁধ ভেঙে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বেড়েছে পানি। নতুন করে আরও বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ ৩৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়। পানিবন্দি হয়ে পড়ে প্রায় ৬শ পরিবার। স্থলবন্দর, বাউতলা, বীরচন্দ পুর, কালিকাপুর, বঙ্গেরচর, সাহেবনগরসহ অন্তত ৩৫টির বেশি গ্রামে পানি ঢুকে পড়ে। ভেঙে যায় গাজীরবাজার এলাকার অস্থায়ী সেতু। বন্ধ হয়ে পড়ে বন্দরের বাণিজ্য ও যাত্রী পারাপার। বৃহস্পতিবার সকালে বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান। এ সময় দুর্গতদের মাঝে শুকনো খাবার চিঁড়া, গুড়, ওরস্যালাই বিতরণ করা হয়। সেনাবাহিনী, পুলিশ, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বিজয়নগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরের বিভিন্ন সড়ক পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। পানি উঠেছে উপজেলার অন্তত ২০টি গ্রামে। এতে অন্তত শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নেন। বন্যায় রেলপথে পানি উঠে যাওয়ায় রেললাইনের বিভিন্ন ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সিলেটের সঙ্গে চট্টগ্রাম ও ঢাকার সব ধরনের রেল যোগাযোগ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা থেকে বন্ধ রয়েছে।
কুমিল্লা ও নাঙ্গলকোট : কুমিল্লায় ক্রমেই ফুঁসে উঠেছে গোমতী নদী। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পানি বিপৎসীমার ৭৫ সেমি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি আরও বাড়তে পারে। কুমিল্লা উত্তর গোমতী পারের ১০ গ্রাম প্লাবিত। বাঁধ রক্ষায় সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন, পাউবো, উপজেলা প্রশাসন, সংশ্লিষ্ট এলাকার পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা কাজ করছেন। বাঁধের বেশ কিছু ঝুঁকিপূর্ণ অংশ দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এদিকে ‘বাঁধ ভেঙে গিয়েছে’ ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রাতভর গুজব ছড়ানোর কারণে বুধবার নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন গোমতীর উভয় তীরের বাসিন্দারা। জেলায় এ পর্যন্ত ২০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দুর্গতদের মাঝে চাল ও শুকনো খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে। সোমবার রাত থেকে কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের বিভিন্ন এলাকায় বন্যায় প্রায় ৯০ শতাংশ এলাকা ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়ে গেছে। ডাকাতিয়া নদীর আশপাশের এলাকাসহ পুরো উপজেলার রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি পানিতে ভাসছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে পার্শ্ববর্তী স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় আশ্রয় নিতে অনুরোধ জানিয়েছেন উপজেলা প্রসাশন। পৌরসদর ছাড়াও পুরো উপজেলা বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন। মোবাইলে ইন্টারনেট সংযোগ ও চার্জ না থাকায় যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে আছে ১২ হাজারেরও বেশি পরিবার। আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ১৩ হাজার ৯৭০ জন। এদিকে নাঙ্গলকোটে বন্যার পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার রাত ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তার নাম মো. কেরামত মিয়া মজুমদার (৫৫)। তিনি উপজেলার পৌরসদরের দাউদপুর উত্তরপাড়া মজুমদার বাড়ির বাসিন্দা।
হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে খোয়াই নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯২ সেমি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শহররক্ষা বাঁধও হুমকিতে পড়েছে। শহরতলীর জালালাবাদ গ্রামের পাশে খোয়াই নদীর বাঁধের ভাঙন দিয়ে প্রবল বেগে হাওড়ের পানি প্রবেশ করছে। ক্রমান্বয়ে ভাঙনটিও বড় হচ্ছে। এভাবে পানি হাওড়ে প্রবেশ করতে থাকলে খুব দ্রুতই পানি মানুষের বাড়িঘরে ঢুকবে।
মৌলভীবাজার : মৌলভীবাজারের চার উপজেলা প্লাবিত হয়েছে। কয়েক শতাধিক বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। জেলা শহরের মনু নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ যে কোনো সময় ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। ইতোমধ্যে মনুনদীর ৮টি এবং ধলাই নদীর ৫টি স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। বুধবার রাতে ও বৃহস্পতিবার সকালে জেলার কুলাউড়া, রাজনগর, কমলগঞ্জ ও সদর উপজেলায় মনু ও ধলাই নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে দুই লাখের উপরে মানুষ পানিবন্দি হয়েছেন। গবাদিপশু ও আসবাবপত্র নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। নৌকা না থাকায় অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারছেন না। পানিতে তলিয়ে গেছে মৌলভীবাজার-কুলাউড়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কদমহাটা এলাকা। জেলা সদরের সঙ্গে চারটি উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) : গত ২৪ ঘণ্টায় বালির বস্তা দিয়ে ভাঙন ঠেকাতে বৃষ্টি উপেক্ষা করে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া মানুষগুলো নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। মনু নদীর ভয়াবহ ভাঙনের ফলে কুলাউড়া উপজেলার সঙ্গে মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর এবং কমলগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। বুধবার মনু নদীর কুলাউড়া অংশে ২টি স্পটে ভাঙন দেখা দেয়। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও নতুন ৬টি স্পটে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। দুই উপজেলায় অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়ে লক্ষাধিক পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। খেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। স্রোতের কারণে মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে যেতেও ভয় পাচ্ছেন। অনেকে মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন।
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) : ধলাই নদীর ৬টি স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে কমলগঞ্জে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার প্রায় ১৪৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে এবং লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। চরম দুর্ভোগে রয়েছেন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ। গৃহপালিত পশু এবং হাঁস-মুরগি নিয়ে চরম সংকটে পড়েছেন কৃষকরা। মাঠেঘাটে খেতে পানি উঠায় চরম গোখাদ্য সংকটে পড়ছেন তারা। বন্যার কারণে খাবার ও বিশুদ্ধ পানি সংকট দেখা দিয়েছে।
চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ) : চুনারুঘাট উপজেলার নালমুখ ও রাজার বাজার এলাকায় খোয়াই নদীর পানির প্রবেশ করছে। এতে ১০-১২টি গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। খোয়াই নদীর পানি বাল্লা পয়েন্টে ২৭৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্তত ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। ভেসে যাচ্ছে রোপা আমনের বীজতলাসহ মাছের ঘের।
শায়েস্তাগঞ্জ (হবিগঞ্জ) : উপজেলার পুরানবাজার বেইলি ব্রিজ ও রেলওয়ে ব্রিজ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। খোয়াই নদীর রেল সেতুর গার্ডারে পানি উঠেছে। অপরদিকে পুরানবাজারের বেইলি ব্রিজটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি থাকায় বৃহস্পতিবার দুপুরে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঢাকা-সিলেট ও চট্টগ্রাম-সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সিলেট রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ হওয়ায় সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী আন্তঃনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস শ্রীমঙ্গল স্টেশনে আটকা পড়েছে।
রাঙামাটি ও কাউখালী : সদরসহ জেলার বাঘাইছড়ি, লংগদু, বরকল, জুরাছড়ি ও বিলাইছড়ি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নতুন করে প্লাবিত হয়েছে বহু গ্রাম। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন এসব প্লাবিত গ্রামের অসংখ্য পরিবারের বাড়িঘর ও স্থাপনা। সবচেয়ে খারাপের দিকে বাঘাইছড়ির পরিস্থিতি। বুধবার সকাল থেকে বাঘাইছড়ি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করে, যা ক্রমে বেড়েই চলেছে। এদিকে অব্যাহত বৃষ্টিপাতে সদরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস হচ্ছে। ফলে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম প্রধান সড়কসহ জেলার বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। বাঘাইছড়ি উপজেলায় বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় ইতোমধ্যে ১৫ হাজারেরও অধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। উপজেলার প্রায় ৩০টি গ্রামে বন্যার পানি উঠেছে। এছাড়া উপজেলার বারেবিন্দু ঘাট এলাকার একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় পানি ঢুকেছে পৌর এলাকায়। পানি ঢুকে পড়েছে বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ ভবনে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি।
খাগড়াছড়ি : খাগড়াছড়ি শহরের ভেতরে প্রবেশ করছে বন্যার পানি। সকাল থেকে শহরের আদালত সড়ক, মাস্টারপাড়া, মিলনপুর, বায়তুশরফসহ খাগড়াছড়ি পৌর শহরের সাতটি সড়ক এখন পানির নিচে। জেলা সদরের বেশিরভাগ এলাকার মানুষ পানিবন্দি। বুধবার পানি কমে যাওয়ায় খাগড়াছড়ি জেলা সদরের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে আসা পরিবার বাড়ি ফিরেছিল। তবে বৃহস্পতিবার ভোর থেকে পুনরায় বন্যার পানি প্রবেশ করতে শুরু করেছে। ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে মাইনী নদীর পানি বেড়ে দীঘিনালার মেরুং, বোয়ালখালি ও কবাখালি ইউনিয়নের ৫০ গ্রাম প্লাবিত হয়। দীঘিনালা-লংগদু সড়কের হেডকোয়ার্টার এলাকায় সড়ক ডুবে যাওয়ার রাঙামাটির লংগদুর সঙ্গে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ডুবে গেছে মেরুং বাজার। জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, খাগড়াছড়ি পৌরসভায় ১৮টিসহ পুরো জেলায় ৯৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
বান্দরবান ও নাইক্ষ্যংছড়ি : নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নে ৮ গ্রাম প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৪ শতাধিক পরিবার। ভেসে যায় গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি, নষ্ট হয় ফসল, বীজতলা। দক্ষিণ বাইশারী গ্রামের নুরুল আলম জানান, ভোর রাতের এক ঘণ্টা বৃষ্টিতে পুরো গ্রাম ডুবে যায়। বাইশারী ইউনিয়ন বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়।
কক্সবাজার, রামু, পেকুয়া ও চকারিয়া : জেলায় প্রায় তিন লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রামুতে বন্যার পানিতে ভেসে গিয়ে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে ও নিখোঁজ রয়েছেন দুজন। এরমধ্যে চৌচিং রাখাইন ও আমজাদ নামের দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে পাহাড় ধসে ১০টি বসতঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। পানিতে ৩টি সড়ক তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ। রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান পানির তোড়ে বাঁধ ভেঙে কয়েকটি সড়ক বিধ্বস্ত হয়।
পেকুয়া উপজেলায় ২০ গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার টৈটং, শিলখালী, বারবাকিয়া, সদর ইউনিয়ন, উজানটিয়া ও মগনামায় বেড়িবাঁধ ভেঙে ও উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। চকরিয়া উপজেলায় অন্তত ১৫ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে ৫০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে মাতামুহুরী নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। হারবাং ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড গাইনাকাটা এলাকায় ভারি বর্ষণের ফলে ১৫টি কাঁচাঘর ধসে পড়ে।
মীরসরাই (চট্টগ্রাম) : মীরসরাই উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের লাখো মানুষ পড়েছেন দুর্যোগের কবলে। উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের অন্তঃত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার, অলিনগর, কাটাগাং, ধূম ইউনিয়নের গনকছরা, আজমনগর, শুক্কুইরবাড়িয়া হাটের অর্ধলাখ মানুষ বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন।
এছাড়া চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা, মৌলভীবাজারের বড়লেখায় শত শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।