বাংলাদেশ

বাবাকে না বলে আন্দোলনে যান নাফিসা, ফেরেন লাশ হয়ে

বছরের নাফিসা হোসেন মারওয়া। চলতি বছর টঙ্গীর শাহাজ উদ্দিন সরকার স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছিল।

নাফিসার বাবা আবুল হোসেন পেশায় একজন চা দোকানি। নাফিসা ও তার ছোট বোন রাইসাকে নিয়ে বাবা আবুল হোসেন থাকতেন টঙ্গীর এরশাদ-নগর বস্তি এলাকার আট নাম্বার ব্লকে একটি ভাড়া বাড়িতে। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে নাফিসার মা কুলসুম বিদেশে পাড়ি জমান কয়েক বছর আগে।

এরই মধ্যে শুরু হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। নাফিসা রাজধানীর উত্তরায় আন্দোলনে যোগ দেয়। বাবা বিষয়টি জানতে পেরে নাফিসাকে নিষেধ করেন। তারপরও মেয়ে কথা শুনতো না। যাতে মেয়ে আন্দোলনে না যায়, সেজন্য বাবা মেয়েকে মামার বাড়িতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। গত ১ আগস্ট নাফিসা চলে যায় ঢাকা জেলার সাভারের বক্তার-পুর এলাকার মামার বাড়িতে। সেখানে গিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করেও বৈষম্য-বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যায়।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার বিদায়ে পূর্ব মুহূর্তে পুলিশ তার বুকে গুলি করে। এতে আহত হয় নাফিসা। অন্যান্য শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে তার বাবা হাসপাতাল থেকে লাশ নিয়ে আসেন টঙ্গীর এরশাদ-নগর এলাকায়। রাতেই লাশ দাফন করা হয় এলাকার স্থানীয় গোরস্থানে।

নাফিসার মৃত্যুর পর বাবা আবুল হোসেন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বসে থাকেন কবরের পাশে। মেয়ের প্রিয় জবা ফুল এনে জড়ো করছেন কবরের পাশেই। কখনো কখনো চিৎকার করে কেঁদে উঠেন। গুলি লাগার পর নাফিসা তার বাবাকে ফোনে করে বলছে- বাবা আমার লাশটা নিয়া যাইও, আমি মইরা যামু।

ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিদায় হলে শহীদ নাফিসার নিহত হওয়ার খবর ভাইরাল হয়। সবাই নিহতের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন। সেই সঙ্গে তারা তার জান্নাত কামনা করে পোস্ট করেন।

মো. খালেদ হোসাইন নামে একজন লিখেছেন, শত শত নাফিসাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা সুবিধাভোগীরা নির্ভয়ে বাস করতে পারছি। নাফিসারা বেচে থাকুক আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে।

অ্যাড. আবু হাসান নামে একজন লিখেছেন, আল্লাহ এই দেশমাতাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন, আমিন।

মুমতাজ উদ্দিন নামে একজন লিখেছেন, এমন অনেক নাফিসাদের জন্য‌ই গণঅভ্যুত্থান সফল হয়েছিল। সরকারকে তার পরিবারের পাশে দাঁড়ানো উচিত।

সোর্স: দৈনিক দিগন্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button