বাংলাদেশ

২০৩২ সালে পৃথিবীতে গ্রহাণুর আঘাত হানার সম্ভাবনা বাড়ছে

বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : ২০৩২ সালে পৃথিবীতে আঘাত হানতে পারে এমন গ্রহাণু নিয়ে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। প্রথমে এই গ্রহাণুর পৃথিবীর সঙ্গে সংঘর্ষের সম্ভাবনা ছিল ১ শতাংশ। তবে সম্প্রতি সৌরজগতের আশপাশে এর যাত্রাপথ সম্পর্কে নতুন তথ্য পাওয়ার পর বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সংঘর্ষের সম্ভাবনা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই শতাংশে। তাই বিজ্ঞানীরা এর গতি এবং আকারের আরও নির্ভুলভাবে পরিমাপের জন্য জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে গ্রহাণুটি পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ইএসএ)।

গত বছরের ডিসেম্বরে ‘২০২৪ ওয়াইআর৪’ নামের গ্রহাণুটির সন্ধান পাওয়া যায়। পৃথিবীকে নিরাপদ রাখতে কোনো সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন হয় কি না, তার জন্য গ্রহাণুটির ছোট ছোট ঝুঁকির দিকটিও ভালোভাবে খতিয়ে দেখতেই টেলিস্কোপটি ব্যবহার করবেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।

এক ব্লগ পোস্টে ইএসএ লিখেছে, সংঘর্ষের সম্ভাবনা খুবই কম এবং গ্রহাণুটি ছোট হওয়ায় এর প্রভাব স্থানীয় পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকবে। তবে, এই পরিস্থিতি এতটা গুরুতর যে, এটি বৈশ্বিক গ্রহাণু প্রতিরক্ষা সম্প্রদায়ের নজরে রাখতে হবে।

জেমস ওয়েব টেলিস্কোপটি নাসা, ইএসএ ও কানাডীয় মহাকাশ সংস্থার (সিএসএ) একটি আন্তর্জাতিক অংশীদারত্বে পরিচালিত হচ্ছে।

এই ঘোষণা গুরুত্বপূর্ণ এবং একই সঙ্গে উদ্বেগেরও বিষয়। কারণ জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ ব্যবহারের জন্য আগে থেকেই গবেষক ও প্রতিষ্ঠানের কাছে নির্ধারিত সময় অনুযায়ী বরাদ্দ করা থাকে। এভাবে গ্রহাণুটি পর্যবেক্ষণ করার জন্য টেলিস্কোপের সময় হুট করে বরাদ্দ করা একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর প্রথমবারের মতো ‘২০২৪ ওয়াইআর৪’ গ্রহাণু শনাক্ত করা হয়। এর পর থেকে এটি পৃথিবীর কাছাকাছি আছড়ে পড়তে পারে এমন গ্রহাণুদের ‘ঝুঁকি তালিকা’য় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

অতিরিক্ত পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে সাধারণত একটি গ্রহাণুর কক্ষপথের আকার আরও নির্ভুলভাবে বের করা যায়, যা পরবর্তীতে সংঘর্ষের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।

তবে গ্রহাণু ২০২৪ ওয়াইআর ৪-এর ক্ষেত্রে বিষয়টি একদম বিপরীত হয়েছে। গত কয়েক সপ্তাহে আরও কিছু নতুন তথ্য জানা গেছে। এসব তথ্য অনুযায়ী, ২০৩২ সালের ২২ ডিসেম্বর পৃথিবীর সঙ্গে এই গ্রহাণুর সংঘর্ষের সম্ভাবনা বেড়ে গেছে। শুরুতে যে সম্ভাবনা ছিল প্রায় ১ শতাংশ, তা এখন বেড়ে ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

এটি এখনো সম্ভবত পৃথিবীকে পাশ কাটিয়ে যাবে। তবে বিজ্ঞানীরা বিষয়টি খুব সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করতে চাইছেন। ওয়েব টেলিস্কোপের মূল্যবান সময় ব্যবহার করে এর কক্ষপথ এবং আকারের আরও নির্ভুল পরিমাপ করতে চাইছেন তাঁরা।

সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, এই গ্রহাণুর ব্যাস ৪০ থেকে ৯০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। এটি ২০১৩ সালে রাশিয়ায় আঘাত হানা গ্রহাণুর আকারের মতো হতে পারে। এটি বায়ুমণ্ডলে বিস্ফোরিত হয়ে চেলিয়াবিনস্ক শহরে হাজার হাজার জানালার কাচ ভেঙে ফেলেছিল এবং এ ঘটনায় কয়েকশ মানুষ সামান্য আঘাত পেয়েছিল। একটি বরফাচ্ছন্ন হ্রদে আছড়ে পড়ে এই গ্রহাণু। আছড়ে পড়ার পর এর মাত্র ১ মিটার অবশিষ্ট ছিল।

তবে যদি ৯০ মিটার আকারের গ্রহাণু আঘাত হানে, তার প্রভাব অনেক বেশি হতে পারে। ১৯০৮ সালের সাইবেরিয়ার তুঙ্গুস্কা ঘটনাটির মতো প্রভাব ফেলতে পারে। এটি লাখ লাখ গাছকে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল এবং প্রত্যক্ষদর্শীর মতে, কয়েকজন মানুষ মারা যায়। যদি এমন আঘাত কোনো বড় শহরের ওপর হয়, তবে তার ফলাফল মহাবিপর্যয়ের মতো হতে পারে।

ভালোবাসা দিবসে প্রিয়জনের জন্য সঠিক উপহার

ওয়েব টেলিস্কোপের মাধ্যমে গ্রহাণুটির প্রথম পর্যবেক্ষণ মার্চ মাসে শুরু হবে এবং পরবর্তী পর্যবেক্ষণটি মে মাসে নির্ধারিত হয়েছে।

আশা করা হচ্ছে, খুব শিগগিরই এর সম্ভাব্য হুমকি সম্পর্কে আরও পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাবে। পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য আরও ভালোভাবে পরিকল্পনা করা যাবে।

তথ্যসূত্র: ফোর্বস

সোর্স: জুম বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button