বাংলাদেশ

শনি গ্রহের ১২৮টি নতুন চাঁদ আবিষ্কার

বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : সৌরজগতের সবচেয়ে বেশি চাঁদের মালিক হওয়ার দৌড়ে আরও একধাপ এগিয়ে গেল শনি গ্রহ। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা শনির চারপাশে আরও ১২৮টি নতুন চাঁদের সন্ধান পেয়েছেন। এই আবিষ্কারকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সংস্থা (IAU)। ফলে শনির এখন মোট চাঁদের সংখ্যা ২৭৪টি। আর গ্রহরাজ বৃহস্পতির সেই ৯৫টি চাঁদই রয়ে গেছে। আসলে শনি গ্রহ ছাড়া আর কোনো গ্রহের ১০০টি চাঁদ নেই।

তাইওয়ানের তাইপেতে অবস্থিত অ্যাকাডেমিয়া সিনিকার জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড অ্যাশটন ও তাঁর সহকর্মীরা কানাডা-ফ্রান্স-হাওয়াই টেলিস্কোপ ব্যবহার করে শনির চারপাশে এই নতুন চাঁদগুলো শনাক্ত করেছেন। তাঁরা দীর্ঘ সময় ধরে শনি গ্রহের ছবি তুলেছিলেন এবং সেগুলো বিশ্লেষণ করে আগের বিজ্ঞানীদের না দেখা অনেকগুলো চাঁদ খুঁজে পান। বিজ্ঞানীরা প্রথমে শনির চারপাশের আকাশের বহু ঘণ্টার ছবি তোলেন। যেহেতু শনি গ্রহও মহাকাশে স্থির নয়, তাই তাঁরা প্রথমে শনির অবস্থানের পরিবর্তন হিসাব করে ছবিগুলোকে সংশোধন করেন, যেন শনির গতি ছবিগুলোকে প্রভাবিত করতে না পারে। এরপর, সেই ছবিগুলো একটির ওপর আরেকটি স্তূপীকৃত (stacked) করেন।

এই পদ্ধতির ফলে যেসব বস্তু খুব ক্ষীণ আলোর জন্য সাধারণভাবে দেখা সম্ভব ছিল না, সেগুলো প্রকাশিত হয়ে যায়। কারণ, যখন একই জায়গার অনেক ছবি একত্রে রাখা হয়, তখন উজ্জ্বল বস্তু আরও স্পষ্ট হয় এবং ক্ষীণ বস্তুগুলোও ধীরে ধীরে চোখে পড়তে শুরু করে। এই বিশেষ কৌশলে বিজ্ঞানীরা শনির ১২৮টি নতুন চাঁদ শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন।

তবে শনি গ্রহের চারপাশে যে আরও চাঁদ বা উপগ্রহ আবিষ্কৃত হবে, তা অনুমেয়ই ছিল। ২০১৯-২০২১ সালের মধ্যে যখন শনির নতুন ৬২টি ছোট বস্তু শনাক্ত করা হয়েছিল, তখনই এর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তখন গ্রহটির চারপাশে আরও কিছু বস্তু দেখা গিয়েছিল, কিন্তু সেগুলোকে চাঁদ হিসেবে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। কারণ, কোনো বস্তুর ব্যাস ও কক্ষপথ জানতে না পারলে সেগুলোর নামকরণ করা হয় না। কিন্তু এখন ওসব বস্তু সম্পর্কে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। তাই আন্তর্জাতিক জ্যোতির্বিজ্ঞান সংস্থা সেগুলোকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফলে শনি গ্রহের নামের পাশে যুক্ত হয়েছে আরও ১২৮টি চাঁদ।

নতুন এই চাঁদগুলো সৌরজগতের শুরুর দিকে শনির মহাকর্ষ বলের ফাঁদে আটকে পড়েছিল। পরে একাধিক সংঘর্ষের ফলে এগুলো আরও ছোট ছোট টুকরোয় ভেঙে যায়। সম্ভবত ১০ কোটি বছর আগে একটি বড় সংঘর্ষ হয়েছিল।

এ ব্যাপারে জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড অ্যাশটন বলেন, ‘আমরা জানতাম যে এগুলোর চাঁদ হওয়ার ভালো সম্ভাবনা আছে। আমরা আরও অনেক চাঁদ আবিষ্কারের অপেক্ষায় ছিলাম। এজন্য ২০২৩ সালে টানা তিন মাস আকাশের একই অংশ পর্যবেক্ষণ করি। এভাবে ১২৮টি নতুন চাঁদ খুঁজে পাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের হিসাব অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি গ্রহের দৌড়ে বৃহস্পতি আর কখনোই শনিকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে না।’

তবে নতুন আবিষ্কৃত এই চাঁদগুলো পৃথিবীর চাঁদের মতো বড় ও গোলাকার নয়। এগুলোর আকার মাত্র কয়েক কিলোমিটার। দেখতেও আমাদের চাঁদের মতো সুন্দর নয়। ওগুলো অমসৃণ এবং ‘অনিয়মিত চাঁদ’।

গবেষকেরা কিছু মহাকাশীয় বস্তুকে অনিয়মিত চাঁদ বা ‘ইরেগুলার মুনস’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এ ধরনের চাঁদগুলো গ্রহের মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রে গ্রহাণু আটকা পড়ে তৈরি হয়। এ উপগ্রহগুলো উপবৃত্তাকার কক্ষপথে গ্রহকে প্রদক্ষিণ করে। আর নিয়মিত উপগ্রহগুলোর তুলনায় গ্রহের দিকে বেশি ঝুঁকে থাকে।

শনি গ্রহের চারপাশে যে আরও চাঁদ বা উপগ্রহ আবিষ্কৃত হবে, তা অনুমেয়ই ছিল। ২০১৯-২০২১ সালের মধ্যে যখন শনির নতুন ৬২টি ছোট বস্তু শনাক্ত করা হয়েছিল, তখনই এর ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞানীদের ধারণা, নতুন এই চাঁদগুলো সৌরজগতের শুরুর দিকে শনির মহাকর্ষ বলের ফাঁদে আটকে পড়েছিল। পরে একাধিক সংঘর্ষের ফলে এগুলো আরও ছোট ছোট টুকরোয় ভেঙে যায়। সম্ভবত ১০ কোটি বছর আগে একটি বড় সংঘর্ষ হয়েছিল। সেই সংঘর্ষ থেকেই জন্ম নেয় এই নতুন চাঁদগুলো। এদের অবস্থানও এই তত্ত্বকে সমর্থন করে।

HTC Wildfire E5 Plus: কমমূল্যে সেরা ফিচারের ফোন, রইল স্পেসিফিকেশন!

নতুন আবিষ্কৃত এই চাঁদগুলো শনি গ্রহের নর্স গ্রুপে অবস্থিত। শনির বেশ কিছু অনিয়মিত চাঁদের একটি বিশেষ শ্রেণিকে বলে নর্স গ্রুপ। এখানকার বস্তুগুলো গ্রহটির বিপরীত দিকে ঘোরে। অর্থাৎ, শনি গ্রহ যেদিকে ঘোরে, ওই বস্তুগুলো ঘোরে তার উল্টো দিকে। এখানকার বস্তুগুলো দেখতে অনেকটা আলুর মতো।

সূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট ও নিউ সায়েন্টিস্ট

সোর্স: জুম বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button