‘সব ওয়েবসাইটে দেব, যেন মানুষ দেখতে পারে কোন দল কথা রেখেছে’
‘সব ওয়েবসাইটে দেব, যেন মানুষ দেখতে পারে কোন দল কথা রেখেছে’
জার্মান পত্রিকা দের স্পিগেলের সঙ্গে দীর্ঘ সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার (২৭ মার্চ) এটি প্রকাশ করা হয়েছে। এই সাক্ষাৎকারে জুলাই অভ্যুত্থান, সরকার প্রধানের দায়িত্ব গ্রহণ, শেখ হাসিনার দুঃশাসন, সংস্কার প্রস্তাবনাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি।
এরমধ্যে সংস্কার প্রস্তাবনা নিয়ে দের স্পিগেলের সাংবাদিক লরা হোফলিঙ্গার তাকে জিজ্ঞেস করলে বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি জানান, বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কার প্রস্তাব করা হয়েছে। যেগুলো রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানো হবে এবং তাদের সংস্কার বিষয়ে ‘সম্মত’, ‘অসম্মত’, অথবা ‘পরিবর্তনসহ সম্মত’ এ তিনটি উত্তর দিতে বলা হবে। এরমাধ্যমে দলগুলোর কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি নেওয়া হবে এবং সেগুলো ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। যেন সাধারণ মানুষ দেখতে পারেন কারা কথা রেখেছে আর কারা রাখেনি। এছাড়া এটি ‘জুলাই সনদ’ হিসেবেও স্বীকৃতি পাবে বলে জানান ড. ইউনূস।
তাকে প্রশ্ন করা হয়— “(সাবেক প্রধানমন্ত্রী) হাসিনা ও তার দল ২০০৯ সালে সুষ্ঠু নির্বাচনের পর ক্ষমতায় এসেছিল। তবে পরবর্তী সরকার যেন (হাসিনা ও আ. লীগের মতো স্বৈরাচার না হতে পারে) রাষ্ট্রকে অবমূল্যায়ন না করতে সেজন্য আপনি ১৫টি সংস্কার কমিশন তৈরি করেছেন। যেগুলো নজর দিচ্ছে বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ প্রশাসন এবং অন্যান্য বিষয়গুলোর ওপর। এখন পর্যন্ত কতগুলো সংস্কার কার্যকর করা হয়েছে।”
জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “প্রথম প্রস্তাব ইতিমধ্যে এসেছে এবং আমরা এগুলো একটি এক্সেল স্প্রিডশিটে ট্রান্সফার করেছি। আমরা এটি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠাব এবং তাদের মতামত জানতে চাইব। প্রত্যেকটি প্রস্তাবে তিনটি অপশন থাকবে: সম্মত, অসম্মত, অথবা সম্মত সঙ্গে পরিবর্তনের অনুরোধ। সবাই যেসব প্রস্তাবে সম্মত হবে সেগুলো আমরা একটি ডকুমেন্টে এক করব। এই ডকুমেন্টে সবাইকে স্বাক্ষর করতে হবে। এটি আমাদের জুলাই সনদ হবে। যেটির নামকরণ করা হয়েছে গণআন্দোলনের মাসের নামে।”
তখন তাকে প্রশ্ন করা হয় এই জুলাই সনদ মানতে রাজনৈতিক দলগুলো বাধ্যগত থাকবে কি না। জবাবে ইউনূস বলেন, “না, আমরা বিষয়টি রাজনৈতিক দলের প্রতিশ্রুতির মধ্যে রাখব। আমরা তাদের জনসম্মুখে প্রতিশ্রুতি দিতে বাধ্য করছি। আমাদের কী শুধুমাত্র একজন প্রার্থী ও দল বিজয়ী হওয়ার পদ্ধতি থেকে সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্বের দিকে যাব? একজন প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ কী দুইবারে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি তাদের অনির্দিষ্টকাল ক্ষমতায় থাকার সুযোগ রাখা হবে। যেমনটা এখন আছে। আমরা (রাজনৈতিক দলগুলোর) উত্তর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করব। যেন মানুষ দেখতে পারে কারা কথা রেখেছে— এবং কারা সত্যি নতুন বাংলাদেশ চায়।”
ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করা হয় একটি দলের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা আছে। যাদের দুর্নীতি ও সহিংসতা করার ইতিহাস আছে। তারা কী এই জুলাই সনদের কথা রাখবে কি না। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তারা যেহেতু নির্বাচিত সরকার নয়। তাই এসব সংস্কার নির্বাচিত সরকারই কার্যকর করতে পারবে। তবে দলগুলো এগুলো কার্যকর না করার সুযোগ খুঁজবে অথবা পরিবর্তনে দেরি করতে পারে।”
এছাড়া চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে নির্বাচন হবে বলে জানিয়েছেন ড. ইউনূস। তাকে সবশেষে প্রশ্ন করা হয়, তিনি কী প্রত্যাশা করছেন আগামী কয়েক মাসের মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান হিসেবে তার সময় শেষ হয়ে যাবে। জবাবে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, অবশ্যই।”
সূত্র: dailycomillanews