ভিডিও
ট্রেন্ড

শেখ হাসিনা যেভাবে মেজর বজলুল হুদাকে জেলখানায় জবাই করেছিল

মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পাকিস্থান বন্দি শিবির থেকে যে কয়জন অফিসার পালিয়ে এসে বাংলাদেশে যুদ্ধ করেছিলেন তাদের অন্যতম মহান বীর মেজর বজলুল হুদা।
স্বাধীনতার পর শেখ মুজিব বিনা ভোটে ক্ষমতা দখল করে দেশকে ভারতের কলোনী বানাতে জনগণকে জিম্মি করে ফেলে। ভারতীয় আগ্রাসন বিরোধী প্রধান ইসলামী দল জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়। আগ্রাসন বিরোধী কমিউনিস্ট ও বামপন্থী দলগুলোর নেতাকর্মীদের হত্যা করা হয়।

এক পর্যায়ে ১৯৭৫ সালের ২ জানুয়ারি মহান বীর শহীদ কমরেড সিরাজ সিকদারকে শেখ মুজিব নিজে নেতৃত্ব দিয়ে নির্যাতন করে এবং ক্রসফায়ার করে হত্যা করা হয়। হত্যার আগে শহীদ সিরাজ সিকদার ভারতীয় দালাল ফ্যাসিস্ট হিসাবে মুজিবকে ঘৃণা জানান। এই শাহাদাতের ২৩ দিন পর মুজিব গণতন্ত্র বিলুপ্ত করে একদলীয় ফ্যাসিবাদ বাকশাল কায়েম করে। এরপর সর্বহারা পার্টি ও সেনাবাহিনীর বিপ্লবীরা শেখ মুজিবকে উৎখাতের পরিকল্পনা করে।

১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট একদল বীর সেনানী জাতিকে দিয়েছিলো এক ‘ডিভাইন জাস্টিস’। জাতিকে মুক্ত করেছিলো এক রাহুগ্রাস থেকে। মুজিবকে উৎখাত করে ধরে এনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ধরে এনে বিচার করার পরিকল্পনা ছিল বিপ্লবীদের। কিন্তু মুজিব পরিবারের সদস্যরা ছিল প্রকৃত সন্ত্রাসী ফ্যাসিস্ট। এরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে অস্ত্রের মুখে তুলে এনে জোর করে বিয়ে থেকে শুরু করে ব্যাংক ডাকাতিও করেছিল। এই সন্ত্রাসী তথা শেখ কামাল ও জামালই প্রথম সেনাদের ব্রাশফায়ার করে।

তখন সেনাবাহিনী বাধ্য হয়ে পাল্টা গুলি চালালে মুজিব পরিবারের নারী ও শিশুরাও নিহত হয়। দেখবেন আওয়ামী মিথ্যাচারীরা কখনোই বলে না যে কামাল জামাল আগে গুলি করায় সেনারা পাল্টা গুলি করেছিল।
হ্যা, একমাত্র মুজিবকেই ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করে হত্যা করেছিলেন মেজর নূর। তিনি সর্বহারা পার্টির কমরেড ছিলেন। শহীদ সিরাজ শিকদার হত্যার বদলা হিসাবে তিনি মুজিবকে হত্যা করেন।

তবে মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে জাতি ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পাওয়ার কৃতজ্ঞতা স্বরূপ বিপ্লবী সেনাদের ৭৫ এর ২৬ সেপ্টেম্বর তৎকালীন খোন্দকার মোশতাক সরকার ইন্ডেমনিটি আইনের মাধ্যমে দায়মুক্তি দিয়েছিল।

১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার দায়মুক্তি অধ্যাদেশটি বাতিল করে৷ জাতীয় বীরদের হত্যার বিচারিক নাটক শুরু করে।

সাজানো মামলায় বিশ জনকে শেখ মুজিব হত্যার আসামি করা হয়েছিল। প্রায় চার বছর মিথ্যা বিচার শেষে রায় দেওয়া হয়। রায়ে ১৫জনকে ফাঁসি ও ৫জনকে খালাস দেওয়া হয়।

তবে ওই রায় এতটা বেআইনী ও ভুয়া ছিল যে হাইকোর্টের ৮জন বিচারপতি এটির কনফার্মেশনের শুনানিতে বিব্রতবোধ করেন। পরে খাঁটি বাকশালী ফ্যাসিস্ট বিচারকরা কনফার্মেশন দেয়।

এতে মোট ১২জনের ফাঁসির রায় বহাল থাকে। তারা হলেন, মেজর (অব.) বজলুল হুদা, মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার), লে. কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল (অব. ) মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), আব্দুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, মোসলেমউদ্দিন, রাশেদ চৌধুরী, আব্দুল মাজেদ এবং আব্দুল আজিজ পাশা।

আর খালাস পান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, কে এম ওবায়দুর রহমান, নুরুল ইসলাম মঞ্জুর, তাহের উদ্দিন ঠাকুর ও মেজর (অব.) খায়রুজ্জামান।

তবে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদূদ আহমেদের অবহেলায় বিপ্লবীদের আপিল আবেদন পাঁচ বছর ধরে শুনানি হয়নি। মাঝখানে ওয়ান ইলেভেন চলে আসে। তারপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন উ ভোট জালিয়াতি করে হাসিনাকে ক্ষমতায় বসায়।

হাসিনা ক্ষমতায় বসার দুই মাসের মাথায় সেনাবাহিনীর ভারত বিরোধী অফিসারদের পিলখানা ম্যাসাকারের মাধ্যমে হত্যা করে। ফলে দেশকে দীর্ঘ সময় ধরে শাসন শোষণ করার, ১৫ আগস্টের বীরদের ও জামায়াত-বিএনপি নেতাদের হত্যার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায়।

যার প্রথম ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালের জানুয়ারিতে। তড়িঘড়ি করে সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ আপিল আবেদন খারিজ করে দেয়। মানে নিম্ন আদালতের ফরমায়েশি রায়ের ত্রুটি নিয়ে বিপ্লবের আপিলের শুনানিই হয়নি। বরং আপিল আবেদন খারিজ করার পরপর ২৮ জানুয়ারি বিপ্লবীদের জেলখানায় হত্যা করা হয়।

এই শহীদ বীররা হলেন
মেজর (অব.) বজলুল হুদা, মেজর (অব.) এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার), লে. কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ, লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সৈয়দ ফারুক রহমান এবং লে. কর্নেল (অব. ) মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি)।

জেলখানায় হত্যার শিকার নেতাদের মধ্যে মেজর (অব.) বজলুল হুদা গ্রেপ্তার থেকে শুরু করে শহীদ হওয়া পর্যন্ত অকল্পনীয় নির্মমতার শিকার হন।

মূলত ১৯৯৬ সালে মেজর (অব.) বজলুল হুদাকে গ্রেফতারের পর তার মাকে আওয়ামী লীগের লোকজন লাথি মারতে মারতে ঘর থেকে রাস্তায় এনে ফেলে দেয়। সেই থেকে বৃদ্ধ মহিলা অসুস্থ হয়ে পড়েন। ২০০০ সালের ১৫ মার্চ তিনি ইন্তেকাল করেন।

তখন মায়ের জানাজায় অংশ নিতে বজলুল হুদার প্যারোলে মুক্তির আবেদন জানায় তার পরিবার। কিন্তু মায়ের জানাজায় অংশ নিতে অনুমতি পাননি। তখন মায়ের লাশ জেলগেটে দেখার আবেদন করেন। জেলগেটে ৭ ঘন্টা তার মায়ের লাশ রেখে অনেক তালবাহানা করে বজলুল হুদাকে ১ মিনিটের জন্য মায়ের লাশ দেখতে দেয়।
নির্মমতার এখানেই শেষ নয়।

২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ঘটে সবচেয় পৈশাচিক নিষ্ঠুরতা।

রাত ১১টায় তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব আব্দুস সোবহান শিকদার, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আশরাফুল ইসলাম খান, ঢাকার জেলা প্রশাসক জিল্লুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অমিতাভ সরকার, ডিএমপি কমিশনার এ কে এম শহীদুল হক, ঢাকার সিভিল সার্জন ডা. মুশফিকুর রহমানসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ, র‍্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

১১টা ২০ মিনিটে পাঁচটি কফিন বক্স কারাগারের ভেতরে ঢোকানো হয়।
রাত ১১:৪০ মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের আশেপাশের ও কারাগারের অভ্যন্তরে বিদ্যুৎ একসাথে চলে যায়। ঠিক তখন দুইটা কালো টিল্টেড গ্লাসের পাজেরো জীপ ঢুকে কারা অভ্যন্তরে। এর একটা পাজেরোতে ছিলো শেখ হাসিনা স্বয়ং। হাসিনা নিজে সেদিন ফাঁসির মঞ্চের সামনে উপস্থিত থেকে চারজনের ফাঁসি কার্যকর দেখে।
এরপর ঘটে সেই পৈশাচিক ঘটনা। মেজর বজলুল হুদাকে ফাঁসির মঞ্চে না নিয়ে কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের একটি রুমে রাখা হয়েছিল। চার জনের ফাঁসির কাজ সমাপ্তির পর হাসিনা সেই রুমে যায়।

সেখানে কোরবানির গরু যেভাবে জবাই করা হয় ঠিক একই ভাবে চারজন মেজর হুদার শরীর চেপে ধরেছিল। আর হাসিনা মেজর হুদার বুকের উপর এক পা দিয়ে চেপে রেখে প্রথমে নিজ হাতে মেজর হুদার গলায় ছুরি চালায়। এসময় মেজর হুদার রক্ত ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে হাসিনার শাড়ির বেশকিছু অংশ ভিজে যায়। পরে কাশিমপুর কারাগার থেকে নেওয়া এক হিন্দু জল্লাদ বাকি জবাই কাজ সম্পন্ন করে।

শহীদ মেজর (অব.) বজলুল হুদার লাশ পরেরদিন ১০টায় চুয়াডাঙার আলমডাঙ্গার হাটবোয়ালিয়া গ্রামে তার নিজ বাড়িতে নেওয়ার আগে কয়েক হাজার পুলিশ, বিডিআর ও র‍্যাব অবস্থান নিয়েছিল। লাশ নেওয়ার সাথে সাথে র‍্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ৫ মিনিটের মধ্যে লাশ দাফনের জন্য চাপ দিতে থাকে তার পরিবারের সদস্যেদের। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা ও কয়েক লক্ষ উপস্থিত জনতার চাপের মুখে র‍্যাব কর্তারা পিছু হটে।

এরপর কফিন খুলে দেখা যায় শহীদ বজলুল হুদার লাশ অর্ধেক ডুবে আছে রক্তের মধ্যে। আবার গোসল করানোর জন্য লাশ নামানোর পর দেখা যায় মেজর হুদার গলা কাটা যা জাল বোনার মোটা সুতা দিয়ে সেলাই করা। আর জবাই করে হত্যা করা হয়েছিল বলে ফাঁসির আসামীদের হাত, পা ও ঘাড়ের রগ কেটে মৃত্যু নিশ্চিত করার কিছুই করা হয়নি। বরং তার লায় ছিল স্রেফ জবাই করা আর হাতের উপর একটু চামড়া ছিলা।

২০১০ সালের এ ঘটনার পর এক যুগেরপ বেশি সময় মেজর বজলুল হুদার স্বজনরা তাদের জীবনের নিরাপত্তার কারণে হাসিনার পৈশাচিকতা নিয়ে মুখ খোলেননি।

তবে ২৪ সালের ৫ আগস্ট শত শত ছাত্র হত্যাকারী হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে মহাবীর মেজর (অব.) বজলুল হুদার ভাই মুখ খুলেছেন।

-বাঁশেরকেল্লা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button