ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাকে জামিনে মুক্ত করলেন ছাত্রদল নেতা
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাকে মামলা দিয়ে পুলিশের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে পরদিনই কোর্ট থেকে হলফনামা দিয়ে নিজ জিম্মায় জামিনে মুক্ত করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াসাল রাকিব।
গত ২২ অক্টোবর স্নাতকের পরীক্ষা দিতে আসলে শিক্ষার্থীদের হাতে আটক হয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসম্পাদক আসিফ আহম্মেদ অভি। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। এদিন তাকে পুলিশের হাতে সোপর্দ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অভির বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। ২০১৮ সালে ক্যম্পাসে হামলার ঘটনায় অভিকে প্রধান আসামি করে আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ছাত্রদল নেতা রাকিব।
তবে আটকের পরদিন কোতোয়ালি থানা পুলিশ কোর্টে আসামিকে হাজির করলে মামলার বাদী নিজেই হলফনামা দিয়ে জামিনে মুক্ত করেন জবি শাখা ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক রাকিব। এমনই একটি হলফনামা এসেছে এ প্রতিবেদকের হাতে।
জানা যায়, রাকিব বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হিমেলের অনুসারী। হলফনামায় দেখা যায় ছাত্রদল নেতা ও মামলার বাদী রাকিব, আসামি অভির বিষয়ে সুপারিশ করে উল্লেখ করেন, ‘অত্র ঘটনার সাথে এই আসামির কোনো ধরনের সম্পৃক্ততা নেই’। মামলার ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না এবং অভি কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য নন বলে উল্লেখ করেন মুচলেকায়। আসামি নির্দোষ ও নিরাপরাধী। একই সাথে আসামি যদি জামিনে মুক্তি পায় তাহলে তার পালানোর কোনো সম্ভবনা নেই।’
ছাত্রলীগ নেতা অভির জামিনের ঘটনায় অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, এই অভি আন্দোলনের সময় অস্ত্র নিয়ে ঘুরেছে। ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছে। সে কীভাবে ছাড়া পায়? আমাদের বিভিন্নভাবে আর্থিক প্রলোভন দেখিয়েছে তাকে ছাড়ানোর জন্য কিন্তু আমরা এই ফাঁদে পা দেইনি। কিন্তু মামলার বাদী ছাত্রদল নেতা কীভাবে তার ব্যাপারে সুপারিশ করে ছাড়িয়ে নেয় আমরা বুঝি না।’
এবিষয়ে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা রাকিবকে কালবেলা থেকে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। তবে গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। ওদিন আমি আদালতে যাইনি।’
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. এনামুল হক কালবেলাকে বলেন, ‘২০১৮ সালের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করার পরদিনই মামলার বাদী নিজ জিম্মায় হলফনামা দিয়ে আসামিকে জামিনের আবেদন করেন। যেহেতু বাদী নিজেই জামিনের আবেদন করে তাই তাকে জামিন দেয় আদালত। ওই একই আসামির বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ আরও কয়েকটি মামলা আছে। ওদিনই আমরা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর জন্য আদালতে নথি প্রেরণ করতে একটু দেরি হওয়ায় আসামি ছাড়া পেয়ে যায়।
প্রসঙ্গত, শিক্ষার্থীদের ওপর ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত অভি। একই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন তথ্য প্রশাসনের কাছে দিয়ে শিক্ষার্থীদের হয়রানি করেন। এছাড়া ছাত্রলীগের পদ ব্যবহার করে অভির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
সোর্স: দৈনিক দিগন্ত