বাংলাদেশ

ছাত্রলীগ সভাপতিকে নিয়ে খালেদ মুহিউদ্দীনের প্রোগ্রাম স্থগিত

ছাত্রলীগ সভাপতিকে নিয়ে খালেদ মুহিউদ্দীনের প্রোগ্রাম স্থগিত

বাংলাদেশে সম্প্রতি নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়েছে ছাত্রলীগ। সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেনকে ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ নামক একটি প্রোগ্রামে অতিথি করার পর এবার সেই প্রোগ্রাম স্থগিত করা হয়েছে।

‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ ফেসবুক পেইজের পক্ষ থেকে জরুরি এক নোটিশে জানানো হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এখন নিষিদ্ধ সংগঠন। একাধিক আইনজীবীর পরামর্শ মতে, বাংলাদেশের দিক থেকে ছাত্রলীগের কারও বক্তব্য প্রচার করা আইনত ঠিক হবে না। এই বিবেচনায় নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ সভাপতির অনুষ্ঠানটি স্থগিত করা হলো।

এর আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে একটি প্রোগাম ঘোষণার পর সেটি স্থগিত করেছিলেন তিনি। জানানো হয়েছিল, মির্জা ফখরুল অসুস্থ থাকায় প্রোগ্রামে অংশ নিতে পারছেন না।

ছাত্রলীগের সভাপতিকে নিয়ে এ প্রোগ্রামের সময়সূচি ঘোষণার পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন। ফুঁসে ওঠেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কসহ নেটিজেনরা।।

এ নিয়ে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেছেন, খালেদ মুহিউদ্দীন ভাই, এর পূর্বে কয়টা নিষিদ্ধ সংগঠনের লিডারদের সঙ্গে টকশো করেছেন? এটা আমাদের দুই হাজারের অধিক শহিদের সঙ্গে বেঈমানি, অর্ধ-লক্ষ রক্তাক্ত ভাইবোনের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এক পোস্টে লিখেছেন, নিষিদ্ধ সংগঠনের সভাপতিকে প্রমোট করার মধ্যে দিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের শহীদ ও জাতীয় বিপ্লব ও সংহতির সঙ্গে প্রতারণা করা হলো।

‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ এর ফেসবুক পেইজ থেকে বলা হয়েছিল, ৭ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায়, মুখোমুখি নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগ সভাপতি। ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন- টকশোতে অতিথি সম্প্রতি সরকারি নিষেধাজ্ঞায় পড়া ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।

ওই পোস্টের নিচে খান আশরাফ নামের একজন কমেন্ট করেছেন, নিষিদ্ধ ঘোষিত একটা দলের প্রধানকে মিডিয়ায় আনা মানে তাকে পুনর্বাসনের সুযোগ করে দেওয়া। খালেদ মুহিউদ্দীন সেই কাজটাই করতে চলেছেন। এরকম হলে হিজবুত তাহরিরের সভাপতিকেও দাওয়াত দেন।

আল মামুন রাসেল লিখেছেন, আমাদের আইন অনুযায়ী, এটি আপনি করতে পারেন না। এটি করলে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৯ ধারায় আপনিও অপরাধী হবেন। আশা করি এহেন কাজ থেকে বিরত থাকবেন।

এ প্রসঙ্গে এক্সে এক টুইটে সাংবাদিক মনোয়ার আলম নির্ঝর লিখেছেন, এ ধরনের অনুষ্ঠানকে বলতে পারেন দায়মুক্তি অনুষ্ঠান। খুব বড় ভুল অনুমান না করলে খালেদ মুহিউদ্দীনকে এই দায়মুক্তি টক শো এর গেস্ট ঠিক করে দিছেন বা যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছেন অমি রহমান পিয়াল। এর আগে সালমান এফ রহমান, আজিজদেরকেও তিনি এক সময় দায়মুক্তি দিছে। এদিকে আবার ঠিকানা প্রতিষ্ঠা করছে যারা তাদের সম্পর্কে খোঁজ নেন। এখনকার মালিক দেখে বিভ্রান্ত হইএন না, একদম শুরুর গল্প দেখেন।

ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে গত ২৩শে অক্টোবর প্রজ্ঞাপন জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। সেই প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে- ‘যেহেতু বাংলাদেশের স্বাধীনতা পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে বিশেষ করিয়া বিগত ১৫ বৎসরের স্বৈরাচারি শাসনামলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ হত্যা, নির্যাতন, গণরুম কেন্দ্রিক নিপীড়ন, ছাত্রাবাসে সিট বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নসহ নানাবিধ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল এবং এ সম্পর্কিত প্রামাণ্য তথ্য দেশের সকল গণমাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে এবং কিছু সন্ত্রাসী ঘটনায় সংগঠনটির নেতা-কর্মীদের অপরাধ আদালতেও প্রমাণিত হইয়াছে।’

‘যেহেতু ১৫ জুলাই ২০২৪ তারিখ হইতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রী ও সাধারণ জনগণকে উম্মক্ত ও বেপরোয়া সশস্ত্র আক্রমণ করিয়া শত শত নিরপরাধ শিক্ষার্থী ও ব্যক্তিদের হত্যা করিয়াছে এবং আরও অসংখ্য মানুষের জীবন বিপন্ন করিয়াছে।’

এ প্রজ্ঞাপনে সরকার জানিয়েছে, পাঁচই আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরেও ছাত্রলীগ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক, ধ্বংসাত্মক ও উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ড এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে।

সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে বলেও জানানো হয়েছে। এসব কারণে ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত বাংলা সংবাদপত্র ‘ঠিকানা’র সিইও এবং প্রধান সম্পাদক হিসেবে যোগ দিয়েছেন গত ১৫ আগস্ট। এর আগে তিনি জার্মানভিত্তিক গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন।

সূত্র: dailycomillanews

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button