বাংলাদেশ

ভাবির হোটেলে খাবার খেলে সুযোগ মেলে ‘ভিন্নজগত’ ভ্রমণের!

রংপুরের পীরগাছায় এমন এক হোটেলের সন্ধান মিলেছে যেখানে খেয়ে জিতে নিতে পারেন উত্তরাঞ্চলের অন্যতম বিনোদন স্পট ‘ভিন্নজগত’ ভ্রমণের সুযোগ। তবে তার জন্য আপনাকে এক বসায় খেতে হবে প্রায় দেড় কেজি চালের আড়াই বাটি ভাত বা পোলাও। এরসঙ্গে দেওয়া হবে ৮ পদের ভর্তা, ভাজি, ডিম, ডাল, এক বাটি গরু, মুরগি অথবা হাঁসের মাংস। যদি সব খাবার শেষ না করতে পারেন চিন্তা নেই, দিতে হবে না কোনো জরিমানা। যতটুকুই খাবেন বিল দিবেন মাত্র ১৯৯ টাকা।

অভিনব অফারের এই হোটেলের সন্ধান মিলেছে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার সৈয়দপুর বাজারের ১০০ গজ আগে। দুলাল মিয়া ও শাপলা বেগম নামে এক দম্পতি ওই হোটেলটি পরিচালনা করেন। যা সবার কাছে ‘ভাবির হোটেল’ নামে পরিচিত। বিচিত্র অফারের কারণে হোটেলটি এরইমধ্যে বেশ সাড়া ফেলেছে। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে ভোজন রসিকরা আসছেন খাবার খেতে।

সপ্তাহে শুক্রবার বাদে প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে এ ভাবির হোটেল।

বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টিনশেডের খুব সাদা-মাটা এ ভাবির হোটেল। ভাবি শাপলা বেগম রান্নায় ব্যস্ত। হোটেলের এক পাশে টেবিলের ওপর সাজিয়ে রাখা হয়েছে ভাত, পোলাও, নানা পদের ভর্তা-ভাজি, শাক, ডাল, হাঁস, মুরগি ও গরুর মাংশ।

হোটেল মালিক দুলাল মিয়া জানান, এক সময় ফার্নিচার ব্যবসা ও কোয়েল পাখির খামার করে খুব একটা সুবিধা করতে পারিনি। পরে স্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে এ ভাতের হোটেল করেন। হোটেলে মাত্র ১০০ টাকা থেকে ১৯৯ টাকা পর্যন্ত ৪টি প্যাকেজে যত ইচ্ছে তত খাবার খাওয়ান তিনি। তবে যিনি আড়াই বাটি ভাত বা পোলাও খেয়ে শেষ করতে পারেন তার কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়া হয় না। বরং বিভিন্ন উপহার দেওয়া হয়। এর আগে উপহার হিসেবে নগদ টাকা দিলেও সম্প্রতি তিনি ‘ভিন্নজগত’ ভ্রমণের অফার দিয়েছেন। তবে কেউ ভিন্নজগতে যেতে না চাইলে তাকে নগদ ১২৫০ টাকা দেওয়া হবে। এ ছাড়া হোটেলে অসহায়দের ফ্রিতে খাওয়ানো হয়। এমনকি কেউ যদি বলেন তার কাছে খাওয়ার টাকা নেই তাকেও বিনামূল্যে খাবারের ব্যবস্থা করা হয়।

ভাবি শাপলা বেগম জানান, তাদের হোটেলে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন খেতে আসেন। এটা তার ভালো লাগে। তার স্বামী বিভিন্ন ব্যবসা করে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বর্তমানে এই হোটেল দিয়ে তারা বেশ ভালো আছেন।

ভাবির হোটেলে বর্তমানে ৩ জন কর্মচারী কাজ করছেন। তারা জানান, তারা সেখানে কাজ করে বেশ ভালো বেতন পাচ্ছেন। তাদের নিয়মিত স্যালারি দেওয়া হয়। তাদের সংসারও বেশ ভালো চলছে।

ভাবির হোটেলে খাবার খেতে আসা ভোজনরসিকরা জানান, তারা বিভিন্নজন বিভিন্ন জায়গা থেকে এ হোটেলে খেতে এসেছেন। হোটেলটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। খাবারের মান অনেক ভালো। দামও কম।

অভিনব অফার ও মানসম্মত খাবারের কারণে দিন দিন এ ভাবির হোটেলের সুনাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে হোটেল মালিকের প্রতি অনুরোধ জানান ভোজনরসিকরা।

সোর্স: দৈনিক দিগন্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button