শেষবার ক্যাম্পাসে আসলেন আব্দুল্লাহ, তবে কফিনবন্দী
শেষবার ক্যাম্পাসে আসলেন আব্দুল্লাহ, তবে কফিনবন্দী
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরবর্তী আহত আব্দুল্লাহর অপেক্ষায় ছিলেন তার সহপাঠীসহ সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। কখন আসবেন তিনি! কখন তার সঙ্গে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২২৮নং রুমে এক বেঞ্চে বসে গল্প করবেন সেইসব দিনের কথা। গোটা ক্যাম্পাস অপেক্ষায় ছিলেন আব্দুল্লাহর সাহসিকতার গল্প শুনতে। অপেক্ষার প্রহর শেষ করে আব্দুল্লাহ আসলেন ক্যাম্পাসে। তবে জীবিত নয়, লাশবাহী গাড়িতে চড়ে।
বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) বাদ আসর লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িটি যখন একটু একটু করে ধীরগতিতে ছোট্ট সোহরাওয়ার্দী কলেজে প্রবেশ করছিল পরিবেশ যেন ভারাক্রান্ত হয়ে উঠেছিল। তাঁকে শেষবারের মত বিদায় দিতে উপস্থিত ছিলেন তখন কলেজের সকল বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ।
কফিনবন্দী হয়ে ক্যাম্পাসে শেষবারের মত প্রবেশ করছিল আব্দুল্লাহ। তিনি যেন তার সহপাঠীদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপস নয়, নীতির প্রশ্নে কখনো আপস নয়। মরে গিয়েও যে বেঁচে থাকা যায় তা বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন তিনি।
আব্দুল্লাহর স্মৃতিতে ভারাক্রান্ত সোহরাওয়ার্দী কলেজ ক্যাম্পাস। তার সহপাঠী, অনুজেরা, শিক্ষকেরা তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন লাল ইটের প্রতিটি কোটরে! তার এ মৃত্যুতে সোহরাওয়ার্দী কলেজে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজধানীর তাঁতীবাজার মোড়ে বংশাল থানার সামনে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন আবদুল্লাহ। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা তিনি রাস্তায় পড়ে থাকেন। এরপর প্রথমে তাকে মিটফোর্ড এবং পরে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। সেখানে তার অস্ত্রোপচার করা হয়। দুদিন পর তাকে রিলিজ দিলে তিনি বাসায় চলে যান।
তবে যশোর গিয়ে তার প্রচণ্ড ব্যথা শুরু হলে তাকে আবার ঢাকা মেডিকেলে আনা হয়। চিকিৎসকরা মাথার ভেতরে ইনফেকশন দেখতে পান। পরে আবার তার অপারেশন করা হয়। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় গত ২২ আগস্ট তাকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। গুলিবিদ্ধ হওয়ার ১০০ দিন পর বৃহস্পতিবার সিএমএইচে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেলেন তিনি।
জানা গেছে, নিহত আব্দুল্লাহ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সিএমএইচে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন তার পরিবার ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষক কাজী সাইফুল ইসলাম।
মৃত্যুর পর সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে বাদ আসর সোহরাওয়ার্দী কলেজ ক্যাম্পাসে প্রথম জানাজার জন্য নিয়ে আসা হয়। পরবর্তী বাদ মাগরিব কেন্দ্রীয়ভাবে শহীদ মিনারে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজার পর মৃতদেহ গ্রামের বাড়ী যশোরের বেনাপোলে দাফন করা হবে।
সূত্র: dailycomillanews