বাংলাদেশ

তথ্য গোপন করে নাগরিকত্ব নেওয়ার অভিযোগ এক ভারতীয়র বিরুদ্ধে

কুড়িগ্রামে তথ্য গোপন করে এক ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জাতীয় পরিচয়পত্র নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য মো. সহিদুল ইসলাম।

মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন এবং কুড়িগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবর এ অভিযোগ দেওয়া হয়।

অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির নাম মোস্তাফিজার রহমান (৬৭)। তিনি ভারতের কুচবিহার জেলার দিনহাটা মহকুমার সাহেবগঞ্জ থানার খুবিরের কুটি (চৌধুরীর হাট) গ্রামের মোজাহারুল হক ও মোছা. কবিজন নেছার পুত্র বলে জানা গেছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মোস্তাফিজার রহমান গত ১৯৭৬ সালে ভারতীয় এক হিন্দু রমণীকে নিয়ে ভারত থেকে পালিয়ে এসে কুড়িগ্রামে আশ্রয় গ্রহণ করেন। অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে পুলিশ তাদের আটক করে এবং আইনের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম জেলহাজতে প্রেরণ করেন। এতে প্রায় ৬ মাস জেল খাটেন তারা।

পরে রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় কুড়িগ্রামে বসবাস শুরু করেন। কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি পদে ছিলেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. উমর ফারুক কালবেলাকে বলেন, মোস্তাফিজার রহমান ভারতীয় নাগরিক এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তবে দীর্ঘ সময় কুড়িগ্রামে কীভাবে আছেন। নাগরিকত্ব কীভাবে পেলেন তা আমার জানা নেই। তিনি দীর্ঘদিন জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে বিএনপি ক্ষমতায় এলে ১৯৯৪ সালে বিএনপিতে যোগ দেন।

কুড়িগ্রাম জেলা বিএনপির সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ও কুড়িগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. আবু বকর সিদ্দিক কালবেলাকে বলেন, তার জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্মস্থান কুড়িগ্রাম উল্লেখ করা হয়েছে। এটি তথ্য গোপনের শামিল। জন্ম নিবন্ধন সনদ ছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার কোনো আইন নেই। কীভাবে এনআইডি কার্ড পেলেন তা নির্বাচন কমিশন বলতে পারবে।

তিনি আরও জানান, মোস্তাফিজার রহমানের এনআইডিতে উল্লেখ রয়েছে তার জন্মস্থান কুড়িগ্রাম, ঠিকানা দিয়েছেন কুড়িগ্রাম পৌরসভার হাসপাতাল পাড়া এলাকার বাসিন্দা। আসলে আশির দশকে ডিজিটালাইজড না থাকায় তথ্য গোপন করে তিনি কুড়িগ্রামের বাসিন্দা হয়েছেন। তাছাড়া তিনি ভারতীয় নাগরিক হিসেবে কুড়িগ্রাম জেলখানায় জেল খেটেছেন। জেল কর্তৃপক্ষ থেকে কাগজপত্র সংগ্রহ করলে বিষয়টি খোলাসা হবে।

কুড়িগ্রাম-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সাইফুর রহমান রানা কালবেলাকে বলেন, কুড়িগ্রামের মানুষ অত্যন্ত সহজ-সরল। মানবিক দিক বিবেচনা করে কুড়িগ্রামের মানুষ তার বসবাসে সহযোগিতা করেছে। তবে তিনি যে ভারতীয় নাগরিক এ বিষয়ে সন্দেহ নেই।

নাগরিকত্ব ও জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মোস্তাফিজার রহমানের কালবেলাকে বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমার মানসম্মান ক্ষুণ্ন করার জন্য একটি মহল বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে। নির্বাচন কমিশন আমার জাতীয় পরিচয়পত্র প্রমাণের জন্য প্রমাণাদি চাইলে আমি দিতে প্রস্তুত আছি।

কুড়িগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলমগীর কালবেলাকে জানান, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন অনুযায়ী জাতীয় পরিচয়পত্র পেতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো মিথ্যা বা বিকৃত তথ্য দেওয়া অথবা তথ্য গোপন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

তথ্য গোপন করে এক ভারতীয় ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্র গ্রহণ করেছেন মর্মে আমার দপ্তরে এক ব্যক্তি অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সোর্স: দৈনিক দিগন্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button