বাংলাদেশ

খেলার মাঠ আলু চাষের জন্য প্রস্তুত করলেন মাদরাসা সুপার

খেলার মাঠ আলু চাষের জন্য প্রস্তুত করলেন মাদরাসা সুপার

এবার ভোলার চরফ্যাশনের ওসমানগঞ্জ আইডিয়াল দাখিল মাদরাসার খেলার মাঠে আলু চাষের জন্য ট্রাক্টর দিয়ে জমি প্রস্তুতের অভিযোগ উঠেছে। ওই মাদরাসার সুপার আব্দুল বাতেন সেই মাঠে আলু চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন। খেলার মাঠে আলু চাষের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে এমন একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে এ ঘটনায় নিন্দার ঝড় ওঠে। তবে বিষয়টি মিথ্যে বলে দাবি করেছেন মাদরাসা সুপার।

মাদরাসাটি ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৩ সালে মাদরাসাটির ভবন নির্মাণ ও খেলার মাঠের জন্য ১ একর জমি দান করেন স্থানীয় মরহুম আব্দুল লতিফ মিয়া নামে এক ব্যক্তি। মাদরাসাটির প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ৩ বছর পর ১৯৮৬ সালে এটি এমপিওভুক্ত হয়।

বর্তমানে প্রায় ৫ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী পড়াশোনা করছেন মাদরাসাটিতে। গত বুধবার (২০ নভেম্বর) বিকেলে অধ্যক্ষ আব্দুল বাতেন মাদরাসার খেলার মাঠটি ট্রাক্টর দিয়ে আলু চাষের উদ্দেশ্যে প্রস্তুত করেছেন। এতে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওসমানগঞ্জ আইডিয়াল দাখিল মাদরাসার কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের মাদরাসার সুপার (অধ্যক্ষ) এখানে নিজের মন মতো যা ইচ্ছে তাই করেন। এখন কোথাও খেলার মাঠ নেই। আমাদের মাদরাসার এতো সুন্দর মাঠটি উনি ট্রাক্টর দিয়ে নষ্ট করেছেন। শুনেছি আলু চাষের জন্য এমনটি করা হয়েছে। এখন আমাদের খেলার মাঠ নেই।

স্থানীয় মো. হাসিব, আলামিন ও সাইফুল বলেন, এই মাদরাসায় যে-সব শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করেন তারা সবাই আমাদের গ্রামেরই। প্রতিদিন বিকেলে সবাই মিলে খেলাধুলা করতাম। কিন্তু মাঠখেকো মাদরাসা সুপার আমাদের খেলার মাঠটি আলু চাষের জন্য প্রস্তুত করেছেন। এটি তিনি করতে পারেন না। আমরা প্রশাসনের কাছে সুপারের শাস্তির দাবিসহ মাঠটি আমাদের খেলাধুলার জন্য ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাই।

স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, শুধু মাদরাসা মাঠই নয়, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের খেলার মাঠ নষ্ট করার অধিকার কারো নেই। মাদরাসা সুপার একটি নিন্দনীয় কাজ করেছেন। তাই আমরা তার দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবি জানাই যেন এরপর আর কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এমন কাজ করতে না পারেন।

এদিকে দিয়ে আলু চাষের জন্য ট্রাক্টর মাঠটি প্রস্তুত করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ওসমানগঞ্জ আইডিয়াল দাখিল মাদরাসা সুপার আব্দুল বাতেন। তিনি বলেন, এখানে আগে একটি পুকুর ছিল। সেটি ভরাট করে মাঠ করেছি। মাদরাসাটি আশেপাশে কোনো গাছপালা নেই। টিনসেড হওয়ার কারণে গরমে শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো ক্লাস করতে পারে না। যার কারণে মাঠের চারপাশে বিভিন্ন ধরনের গাছ রোপণ করেছি। কিন্তু স্থানীয় বখাটেরা মাঠে খেলতে খেলতে গাছগুলো সব নষ্ট করে ফেলেছে।

তিনি আরও বলেন, আমি সবার সিদ্ধান্তে মাদরাসার খেলার মাঠে রবিশস্য (সরিষা) চাষের উদ্দেশ্যে ট্রাক্টর দিয়ে প্রস্তুত করেছি। তবে এখনো কোনো বীজ বপন করা হয়নি। এর কারণ হলো কেউ যাতে মাঠে খেলাধুলা করতে না পারে এবং এই সুযোগে মাঠের পাশে রোপণকৃত চারাগাছগুলো যেন বড় হয়।

এদিকে চরফ্যাশন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন জানান, প্রাথমিকভাবে ওসমানগঞ্জ আইডিয়াল দাখিল মাদরাসা সুপার আব্দুল বাতেনকে সতর্ক করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মাঠটি খেলাধুলার জন্য ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে। মাঠে শিক্ষার্থীরাই খেলাধুলা করবে। জানতে চাইলে চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি বলেন, বিষয়টি কেউ আমাকে অবগত করেননি। আমি খোঁজ নিচ্ছি। মাদরাসা মাঠে আলু চাষের জন্য ট্রাক্টর দিয়ে প্রস্তুতের বিষয়টি সত্য হলে অবশ্যই মাদারাসা সুপারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সূত্র: dailycomillanews

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button