বাংলাদেশ

বাজারে হঠাৎ বোতলজাত সয়াবিন তেলের সঙ্কট

জুমবাংলা ডেস্ক : বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকটে ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ ক্রেতারা। খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বাজারে হাতে গোনা দু-তিনটি কম্পানি ছাড়া অন্য কোনো ব্র্যান্ডের বোতলজাত সয়াবিন তেল মিলছে না। কয়েকটি ব্র্যান্ডের তেল মিললেও চাহিদার তুলনায় তা পর্যাপ্ত নয়। বিশেষ করে এক ও দুই লিটারের বোতলের সরবরাহ একেবারেই কম।

তবে বাজারে খোলা সয়াবিন ও পাম তেলের সরবরাহ ঠিক আছে; পণ্য দুটির দামও কিছুটা কমেছে।

জানা গেছে, বাজারে প্রায় এক মাস ধরে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ সংকট চলছে। সরকার ভোজ্যতেল আমদানিতে ভ্যাট কমালে সরবরাহ কিছুটা বাড়ে। তবে এক সপ্তাহ ধরে বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ আবার কমিয়ে দিয়েছে কম্পানিগুলো।

রবিবার রাজধানীর রামপুরা, বাড্ডা, মহাখালী ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাড্ডার মুদি বিক্রেতা মো. আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আগে নিয়মিত ৫ থেকে ৬টি কম্পানি তেল দিত, দুই থেকে তিন সপ্তাহ ধরে মাত্র দুটি কম্পানি তেল দিচ্ছে। যা দিয়ে আমাদের চাহিদার ১০ শতাংশও পূরণ হচ্ছে না। বাকি কম্পানিগুলোর ডিলাররা জানাচ্ছেন তারা নাকি কম্পানি থেকে তেল পাচ্ছেন না।

আগে সপ্তাহে আমাকে তিনটি কম্পানি প্রায় ২০ কার্টন করে তেল দিত। এখন সেই তিন কম্পানি একটাও তেল দিচ্ছে না।’
তিনি বলেন, এখন ক্রেতারা দোকানে এসেই আগে তেল খুঁজেন। যদি তেল দিতে না পারি, পণ্য কিনতে চান না তারা। বাজারে নতুন করে তেলের দাম বাড়াতেই কম্পানিগুলো এমন তালবাহানা করছেন বলেও এই বিক্রেতা জানান।

কারওয়ান বাজারের মুদি দোকানের বিক্রয় সহকারী বেলাল উদ্দিন বলেন, ‘দুই সপ্তাহ ধরে চাহিদার অর্ধেকও বোতলজাত সয়াবিন তেল পাচ্ছি না। কম্পানিগুলো ডিলারদের ঠিকমতো তেল না দেওয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দাম বাড়াতেই এমন কারসাজি হচ্ছে।’

জোয়ারসাহারা বাজারে কথা হয় পারভীন আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বাজারের বেশ কয়েকটা মুদি দোকান ঘুরেও এক লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল পাইনি। দু’একটা দোকানে পাঁচ লিটারের বোতল মিলছে। তাই আজ (রবিবার) বাধ্য হয়ে খোলা সয়াবিন তেল কিনলাম।’

ভোজ্যতেল সরবরাহকারী বড় এক প্রতিষ্ঠানের বিতরণ শাখার প্রধান নাম প্রকাশ না শর্তে বলেন, ‘আমরা এলসি খুলতে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছি না। বরং একাধিকবার এলসি বাতিল করা হয়েছে। যার কারণে বাজারে আমাদের তেল সরবরাহ কমে গেছে।’

বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ভোজ্য তেলের ওপর বর্তমানে প্রযোজ্য আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। এর আগে ১৬ অক্টোবর পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে স্থানীয় উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং স্থানীয় ব্যবসায়ী পর্যায়ে আরোপনীয় ৫ শতাংশ ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হয়। ফলে বর্তমানে কেবল আমদানি পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট চালু রয়েছে।

টিসিবির হিসাবে, এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে খোলা সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ২ টাকা ও পাম তেলের দাম ১ টাকা কমেছে। বর্তমানে এক লিটার খোলা সয়াবিন ১৬৫ থেকে ১৬৮ টাকা এবং এক লিটার খোলা পাম তেল ১৫৭ থেকে ১৫৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৭ থেকে ১৭০ টাকায়।

ক্যাবের নির্বাহী পরিচালক খলিলুর রহমান সজল বলেন, ‘ভ্যাট কমানোসহ নানা সুবিধা দেওয়ার পরও ভোজ্যতেল সরবরাহকারী কম্পানিগুলো তেলের দাম না কমিয়ে উল্টো সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। রমজান মাস আসছে। এখনি যদি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয় তাহলে এবারের রমজান অস্বস্তিকর হতে পারে। আশা করি, অন্তর্বর্তী সরকার বিষয়টি আমলে নিয়ে এখন থেকেই ব্যবস্থা নিবে। রমজানের এক মাস বা ১৫ দিন আগে ব্যবস্থা নিলে এর সুফল ভোক্তারা পাবে না।’

তিনি বলেন, ‘বাজারে খোলা তেল পাওয়া গেলেও ভেজালের ভয়ে অনেক ভোক্তা খেতে চায় না। আবার অনেকে এটি খেতে অভ্যস্ত না হওয়ায় খোলা তেল কিনতে আগ্রহী না।’ সূত্র : কালের কণ্ঠ

সোর্স: জুম বাংলা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button