প্রবাসমালয়েশিয়া

পোল্যান্ডে রাষ্ট্রদূত হিসেবে খোরশেদ খাস্তগীরের নিয়োগ বাতিল

ডেস্ক রিপোর্ট:
পোল্যান্ডে রাষ্ট্রদূত হিসেবে খোরশেদ খাস্তগীরের নিয়োগ বাতিল

প্রবাস বার্তা ডেস্ক

আপডেটের সময় : ৪ ঘন্টা আগে / 34

পেশাদার কূটনীতিক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীর গত ২৫ সেপ্টেম্বর পোল্যান্ডে বাংলাদেশের পরবর্তী রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন। নিয়োগের ১০ দিন পর তাঁর সেই নিয়োগ বাতিল করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

রোববার (৬ অক্টোবর) বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক তৌফিক হাসান বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের উপহাইকমিশনার খোরশেদ আলম খাস্তগীরের পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করা হলো।

তবে বিসিএস ২০তম ব্যাচের (পররাষ্ট্র ক্যাডার) কর্মকর্তার নিয়োগ ১০ দিনের মাথায় কেন সরকার বাতিল করেছে, সে ব্যাপারে জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক কোনো ব্যাখ্যা দেননি।

২০২১ সালের পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দ্বিতীয় কোনো কূটনীতিককে নিয়োগ দিয়ে তা বাতিল করল। ওই বছর পেশাদার কূটনীতিক সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ খন্দকারকে ব্রাজিলে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। পরে মাসুদ মাহমুদ খন্দকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত শুরু হলে তাঁর সেই নিয়োগ বাতিল হয়েছিল।

অবশ্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুলাই–আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সহমর্মিতা জানিয়ে মিছিল ও সমাবেশ করেছিলেন। এরই অংশ হিসেবে গত ১৯ জুলাই বাংলাদেশের ছাত্র–জনতার আন্দোলনে একাত্মতা জানিয়ে মালয়েশিয়ার কুয়ালামপুরে একটি সমাবেশ করেছিলেন দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা। তাঁরা মালয়েশিয়ার নাগরিকদের সহযোগিতাও কামনা করেন।

ওই সমাবেশের পর কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন ছাত্র-শিক্ষকদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে কাজাং থানায় রিপোর্ট করে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও শিক্ষকেরা নানামুখী হেনস্তার শিকার হন। কাজাং থানায় অভিযোগ দাখিলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাস্তগীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন বলে প্রবাসী বাংলাদেশিদের একটি অংশ অভিযোগ করেন। তিনি বাংলাদেশে ছাত্র–জনতার আন্দোলনে যুক্ত লোকজনকে ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যায়িত করে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে শেখ হাসিনা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। পররাষ্ট্র ক্যাডারদের সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএসএ) হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের ফাঁস হওয়া চ্যাটে দেখা যায়, খোরশেদ আলম খাস্তগীর মালয়েশিয়া প্রবাসী যাঁরা ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছিলেন, তাঁদের পাসপোর্ট বাতিলের সুপারিশ করেছিলেন।

প্রসঙ্গত, স্মরণ করা যায়, বিদায়ী শেখ হাসিনা সরকারের আমলে গত বছর খোরশেদ আলম খাস্তগীরকে বাহরাইনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত তাঁকে রাষ্ট্রদূত করার বিষয়ে বাংলাদেশের প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি বাহরাইন। সাধারণত কোনো দেশ অন্য দেশের রাষ্ট্রদূত করার প্রস্তাবে দীর্ঘদিন সাড়া না দিলে ধরে নেওয়া হয়, প্রস্তাবিত ব্যক্তিকে স্বাগতিক দেশটি কূটনীতিক হিসেবে গ্রহণে রাজি নয়। পরে আওয়ামী লীগ সরকার তাঁকে পোল্যান্ডে রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারও ওয়ারশোতে খোরশেদ খাস্তগীরের নিয়োগ বহাল রাখে।

রোববার মানবজমিন পত্রিকা খোরশেদ আলম খাস্তগীরের নিয়োগ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে আর পতিত স্বৈরশাসনের পক্ষে নগ্নভাবে অবস্থান গ্রহণকারী সেই খাস্তগীরকে পোল্যান্ডে বাংলাদেশের নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে ছাত্র-জনতার রক্তের উত্তরাধিকার বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিতর্কিত ওই কূটনীতিককে রাষ্ট্রদূত হিসেবে পদায়নের ঘোষণায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে মালয়েশিয়া প্রবাসীদের মধ্যে। তাঁর নিয়োগ বাতিলের দাবি উঠেছে।

খোরশেদ আলম খাস্তগীর ২০০১ সালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। কূটনীতিক হিসেবে তিনি নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন এবং ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাসে কাজ করেছেন।

সূত্র: প্রথম আলো

Source: প্রবাস বার্তা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button