খেলাধুলা

পেস স্বর্গে স্পিন দাপট, পাকিস্তানের মাটিতে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়

সাম্প্রতিক সময়ে টেস্ট ক্রিকেটে সময়টা ভালো যাচ্ছিল না বাংলাদেশর। এ ছাড়া রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও সাম্প্রতিক বন্যায় কাবু বাংলাদেশ।— এমন পরিস্থিতিতে একটা জয় হতে পারত ক্রিকেটপ্রেমী বাংলাদেশিদের জন্য একটু আনন্দের উপলক্ষ্য। সেই উপলক্ষ্যটা সমর্থকদের এনে দিয়েছেন বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা। পাকিস্তানের মাটিতে প্রথমবারের ঐতিহাসিক টেস্ট জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।

পাকিস্তানকে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৪৬ রানে অলআউট করে দিয়ে মাত্র ৩০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ, যা ১০ উইকেট হাতে রেখেই টপকে যায় নাজমুল হোসেন শান্তর দল। জয়ের পথে জকের করেন ১৫ রান। সাদমানের ব্যাট থেকে আসে ৯ রান। আর তাতেই পাকিস্তানের মাটিতে পায় প্রথম টেস্ট জয়।

বাংলাদেশের এই জয়টা এসেছে অনেকটা কাকতালীভাবেই। নয়তো চতুর্থ দিনের খেলা শেষেও এমন জয় কল্পনা করেননি ক্রিকেটপ্রেমীরা। চতুর্থ দিনশেষে বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান ৯৪ রানে পিছিয়ে থাকলেও ব্যাটিং স্বর্গে হাতে তখনো ৯ উইকেট থাকায় ভাবা হচ্ছিল ড্রই এই টেস্টের পরিণতি। তবে শেষ পর্যন্ত পঞ্চম দিনে বল করতে নেমে পাশার দান পাল্টে দিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা।

বোলিংয়ে দিনের শুরুটা হাসান মাহমুদ ও নাহিদ রানা করলেও পরের গল্পটা কেবলই স্পিনারদের। পাকিস্তান যেখানে পেসার দিয়ে সাজিয়েছে তাদের বোলিং আক্রমণ, সেখানে একাদশে দুই স্পিনার রাখাকে অনেকে বিলাসিতা মনে করেছিলেন। তবে শুরুতে ভুল মনে হলেও দিনশেষে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক স্পিনাররাই। অভিজ্ঞ সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণিতে কাবু পাকিস্তানের সাত ব্যাটার। এক রিজওয়ান ছাড়া সুবিধা করতে পারেননি কোনো ব্যাটার।

চতুর্থ দিনে ২৩ রানে ব্যাট করতে নেমে ৬৪ রানে ৪ উইকেট হারালেও পাকিস্তানকে টানছিলেন রিজওয়ান। প্রথম ইনিংসে ১৭১ রান করে বাংলাদেশকে ভোগানো মোহাম্মদ রিজওয়ান এদিনও বেশ ভুগিয়েছেন বাংলাদেশি বোলারদের। স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে একাই দলকে টেনেছেন এই উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। একটা সময় তো মনে হচ্ছিল শেষ পর্যন্ত না রিজওয়ান টেলেন্ডারদের নিয়ে বাংলাদেশের জয়টা রুখে না দেয়। তবে শেষ পর্যন্ত সেটি হতে দেননি সাকিব-মিরাজ জুটি।

ফিফটির পরপরই মিরাজকে সুইফ খেলতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে স্টাম্প ভাঙে রিজওয়ানের। ৫১ রানে ফেরেন রিজওয়ান। সেই সঙ্গে শেষ হয় পাকিস্তানের শেষ স্বীকৃত ব্যাটারের উইকেট। প্রতিরোধ গড়ার স্বপ্ন ভাঙে পাকিস্তানের। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রান করে ইনিংস ঘোষণা করা পাকিস্তানের দ্বিতীয় ইনিংস থামে মাত্র ১৪৬ রানে। বাংলাদেশের সামনে টার্গেট দাঁড়ায় ৩০ রানের, যা কোনো উইকেট না হারিয়েই টপকে যায় বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের জয়টা মূলত ভিত গড়ে দিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। প্রথম ইনিংসে ১৯১ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলেন তিনি। তাকে সঙ্গ দিয়েছেন লিটন দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তার আগে প্রথম ইনিংসে ৯৩ রান করেছেন ওপেনার সাদমান, ৫০ করেছেন মুমিনুল। লিটন ৫৬ ও মিরাজ ৭৭। যার সুবাদে পাকিস্তানের ৪৪৮ রান টপকে ১১৭ রানের লিড পায় বাংলাদেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button