Uncategorized

আওয়ামী লীগের এমপির বাড়ির ফটকে হঠাৎ সেনা কর্মকর্তার নাম!

আওয়ামী লীগের দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য সুলতানা নাদিরার রাজধানীর নিউ ইস্কাটন রোডের বাড়ির নেমপ্লেটে হঠাৎ বসে গেছে সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেনের নাম। রাজনীতির পট পরিবর্তনে ক্ষমতার হাওয়া ঘুরতেই আলিশান চারতলা বাড়িটির সামনে-পেছনে দুই গেটে নেমপ্লেটে সেনা কর্মকর্তার নাম বসানো হয়েছে। গেট দুটিতে ঝোলানো ব্যানারে বড় হরফে সেনা কর্মকর্তার নামের নিচে বড় হরফে লেখা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ব্যক্তিগত সম্পত্তি রক্ষায় সেনাবাহিনীর নাম ভাঙানো হচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

ঢাকার তেজগাঁও ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর বড় মগবাজার মৌজার ২০৫৩ খতিয়ানের ৪৫১১ দাগের জমির ওপর স্থাপিত বাড়িটির কেনাবেচাও হয়নি। তাহলে হঠাৎ সেখানে ‘এই বাড়িটির মালিক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন’ কীভাবে লেখা হলো। ব্যক্তিসম্পত্তি রক্ষায় সেনাবাহিনীর নামের অপব্যবহার হচ্ছে কিনা সে প্রশ্নও দেখা দিয়েছে।

সুলতানা নাদিরা বরগুনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও একই আসনের প্রয়াত সংসদ সদস্য গোলাম সবুর টুলুর স্ত্রী। একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ছিলেন সুলতানা নাদিরা। ব্রিগেডিয়ার সাজ্জাদ এই এমপি দম্পতির বড় মেয়ে ফারজানা সবুরের জামাতা। কাতারে বাংলাদেশ দূতাবাসের ডিফেন্স অ্যাটাশে হিসেবে কর্মকর্তা ছিলেন। সম্প্রতি তিনি ওই দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। ব্রিগেডিয়ার সাজ্জাদের স্ত্রী ফারজানা সবুর বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে পালালে সঙ্গে সঙ্গে গণভবন ও জাতীয় সংসদ ভবনসহ বিদায়ী সরকার দলের এমপি-মন্ত্রীসহ নেতাদের বাড়িতে হামলা শুরু হয়। ৭ আগস্ট সুলতানা নাদিরার বাড়িটির ফটকে সেনা কর্মকর্তার নামে নেমপ্লেট ও ব্যানার শোভা পায়। অথচ এর আগের নেমপ্লেটে গোলাম সবুর টুলু এমপি এবং সুলতানা নাদিরা এমপি লেখা ছিল। নিরাপত্তা জোরদারে সীমানা দেয়ালের ওপর বসানো হয় গোলাকার কাটাতারের বেড়া। দিনরাত নিরাপত্তায় নিযুক্ত করা হয় বাড়তি লোকজন। ১১ জনের একটি স্বেচ্ছাসেবক টিমও গড়ে তোলা হয়। রাতে টহলরত এসব নিরাপত্তাকর্মীর গলায় শোভা পায় পরিচয়পত্র। তাতে লেখা- ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেনের সৌজন্যে স্বেচ্ছাসেবী টিম।

সুলতানা নাদিরার বাড়িটির বিপরীতে এক বাড়ি পরেই বর্ষীয়ান আওয়ামী লীগ নেতা আমির হোসেন আমুর বাড়ি। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় মহাজোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্রের বাড়ির বলতে গেলে দেয়াল ছাড়া এখন কিছু অবশিষ্ট নেই। সব আসবাব ও খুটিনাটি জিনিসপত্র লুটপাট হয়ে গেছে। স্থানীয় ছাত্ররা বাড়িটিতে লুটপাট ঠেকাতে তালা লাগিয়ে ও টহল বসিয়েও ফল মেলেনি। কিন্তু সেনা কর্মকর্তা জামাতার বদৌলতে সুলতানা নাদিরার বাড়িটি সুরক্ষিত রয়েছে।

সুলতানা নাদিরার মেজ মেয়ে সাবরিনা নাদিরা তিয়াশা বাবার রেখে যাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মধুমতি টাইলস লিমিটেড পরিচালনায় যুক্ত রয়েছেন। ছোট মেয়ে হাছছানা নাদিরা সবুর আইনে ইংল্যান্ড থেকে উচ্চতর ডিগ্রি (বার অ্যাট ল) নিয়েছেন। সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনেও মায়ের জন্য তিন মেয়েই ভোটের প্রচারণায় শক্তভাবে নেমেছিলেন। শক্তিশালী কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বেশ অনায়াসে এ যাত্রায় এমপি হন আগের সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি সুলতানা নাদিরা।

ব্রিগেডিয়ার মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বাড়িটিতে তার নাম বসানো প্রসঙ্গে জানতে চেয়ে ফোন করলে তিনি রিসিভ করেননি। ক্ষুদেবার্তা পাঠাতে বললে কেন কথা বলতে চাই জানালে তার জবাব দেননি। শুক্রবার ও শনিবার তার সাথে কথা বলতে ওই বাড়িতে গেলেও দেখা মেলেনি। দ্বাররক্ষক জানান, ব্রিগেডিয়ার স্যার বনানীতে সরকারি কোয়ার্টারে থাকেন, এই বাসায় মাঝেমধ্যে এসে দেখে যান। এখানে কোনো মেয়েই থাকেন না, যার যার বাসায় তারা থাকেন। এ বাড়িতে কোনো ভাড়াটিয়াও নেই।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রাপ্ত তথ্য যদি সঠিক হয়ে থাকে, সেনা কর্মকর্তা শুধু অনৈতিক কাজ করেননি তিনি প্রতারণা এবং ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। একজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হিসেবে বাড়িটির সুরক্ষায় যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার তার তখন ছিল। একজন সেনা কর্মকর্তার কাছ থেকে এটি প্রত্যাশিত নয়। এর মাধ্যমে আমাদের সেনাবাহিনীর সুনাম ক্ষুন্ন হয়েছে, বাহিনীর কর্তৃপক্ষের উচিত হবে ওই সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button