গণভবন কমপ্লেক্স গুড়িয়ে দিয়ে লো হাইট মেমোরিয়াল দেয়াল?
গণভবন নিয়ে আমার একটা স্বপ্ন আছে | পুরো কমপ্লেক্স টি কে গুড়িয়ে দিয়ে পুরো এলাকাটি রূপান্তরিত হবে একটা খোলা সবুজ ঘাসের চত্বরে| কোন দেয়াল বা ফেন্স থাকবে না| মাঝখানে ওয়ার্ল্ড ট্রেন্ড সেন্টার, ভিয়েতনাম ভেটেরান মেমোরিয়াল বা হিরোশিমা মেমোরিয়াল টাইপের একটা লো হাইট মেমোরিয়াল দেয়াল থাকবে – যাতে এরশাদের বিরোধী গণতন্ত্রের আন্দোলন সহ এই ২০২৪ গণঅভ্যুথ্যানে নিহত সবার নাম খোদিত থাকবে! এই মেমোরিয়াল টার সবুজ চত্বর সংসদ ভবনের সবুজ প্লাজার সাথে মিলে যাবে! সংসদ ভবনের চারপাশের সব ফেন্স গুড়িয়ে ফেলতে হবে| আসাদ গেটের প্রান্তে একটা ছাউনি আলা মুক্তমঞ্চ টাইপের কিছু একটা থাকবে সেখানে যে কেউ যে কোন বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারবে – সমাবেশ করতে পারবে! ওখানে শাপলা চত্বর কর্নার থাকবে – আবরার ফাহাদ কর্নার থাকবে, নূর হোসেন চত্বর থাকবে, আন্ডারগ্রাউন্ডে হলোকস্ট মিউজিয়াম এর মতো কিছু একটা করা যেতে পারে – ইঞ্জিনিয়ারিং মতে সম্ভব হলে|
একই ডিজাইনের মেমোরিয়াল ওয়াল করা হবে দেশের সব জেলা সদরে, প্রতিষ্ঠানে, স্কুল,কলেজ,বিশ্ববিদ্যালয়ে!
প্রতি বছর ১৫ জুলাই থেকে সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানমালা শুরু হবে – পাঁচই আগস্ট হবে সরকারি ছুটির দিন; সকালে সামরিক কুচকাওয়াজ; প্রভাত ফেরী দিয়ে সারাদিনব্যাপী প্রোগাম চলবে! স্কুলের বাচ্চারা জানবে – শিখবে কি হয়েছিল ২০২৪ সালের এদিন এ| ১০, ১৫, ৫০, ১০০ বছর পর ও|
এই সপ্তাহ গুলোতে মসজিদ গুলোতে শুক্রবার জুমার খোৎবাতে জালেম এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের এবং শহীদের মর্যাদা নিয়ে আলাপ থাকবে!
১৯৫২ সালে একজন পুলিশ ইনফর্মার, একজন রুগীর এটেন্ডেন্ট সহ পুলিশের গুলিতে চারজন মারা গিয়েছিলেন! এই চারজন শহীদের জন্যে ওভারনাইট শহীদ মিনার উঠে গিয়েছিলো দেশজুড়ে! শহীদ মিনার ভাঙা হলে আবার স্মৃতির মিনার বানানো হতো ফিনিক্স পাখির মত! ওই চারজন শহীদের জন্যে অমর গানটা লিখা হয়েছে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো”! এই শহীদ দিবস কে সেন্টার করে যেই চেতনার জন্ম হয়েছিল – সেই চেতনা রাষ্ট্রভাষা বাংলা এনেছিল পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রে! তারপরও কিন্তু ওই চেতনা থেকে থাকে নি – সম্রাট নেপোলিয়নের ক্যাভেলরী চার্জের মত সগৌরবে এগিয়ে গিয়েছে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন এর রূপ নিয়ে! এর পর আমাদের স্বাধীনতার সব মাইলস্টোন গুলো আর স্মৃতিগুলো একুশে ফেব্রুয়ারীর স্মৃতির যে চেতনা তার সাথে মিলে মিশে এক হয়ে গিয়েছে! এই চেতনা যেমন বাঙালি জাতীয়তাবাদ কে আগিয়ে নিয়ে গেছে তেমন ওই চেতনার রং সাইডে থাকার কারণে ইউনিফাইড পাকিস্তান এর স্পিরিট/ ধর্মীয় রাজনীতির যে স্পিরিট তাকে সবসময় ব্যাকফুটে রেখেছে! বাংলাদেশের মত দেশ এ ইসলামপন্থী রাজনীতি যে উঠে দাঁড়াতে পারে নি তার কারণ ওই ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী ঘিরে জন্ম হওয়া সেই চেতনা| এই চেতনা যেমন আমাদের রাষ্ট্রভাষা ও স্বাধীনতা দিয়েছে – তেমনি এই চেতনার অপব্যবহার – এবিউজ করেছে গত দুযুগের স্বৈরাচার|
ভাষার চেতনা ও স্বাধীনতার চেতনা যার যার জায়গায় থাকবে – কিন্তু ২০২৪ এর জুলাই অগাস্ট এর চেতনা ঘিরে আমাদের পুরোনো চেতনা সংস্কার করতে হবে – নুতন একটা চেতনার জন্ম দিতে হবে! এই চেতনাটাকে নার্চার করার জন্য আমাদের দরকার “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী” টাইপের নুতন একটা গান| প্রতিটি শিশু যখন ওর কিন্ডারগার্টেন এ গান গেয়ে গেয়ে এই স্মৃতির দেয়ালে ফুলের স্তবক দেবে – তখন ওরা জানবে / শিখবে এই জুলাই গণ অভ্যুথ্যানের যে ইতিহাস তার রং সাইডে কারা ছিল| কোন দল ছিল – কারা ১৫ বছরে দেশে একটা গুমের ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিল| কারা তিন সপ্তাহে এক হাজার ছাত্র হত্যা করেছে – যারা ৬৫ জন শিশুকে মাথায় গুলি করে হত্যা করেছে| কাদের ম্যালগভার্নেন্স এর কারণে ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষে অনেক মতে দশ লক্ষ মানুষ মারা যায়|
বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্যে এই চেতনাটা দাঁড় করিয়ে দিতে হবে! একটা চেতনা দাঁড় করিয়ে দেয়ার জন্যে কিছু সিম্বল – রিচুয়াল লাগে| শহীদ মিনার আর প্রভাত ফেরি আমাদের স্বাধিকার চেতনাটা দাঁড় করিয়ে দিয়ে গেছে| এই নুতন চেতনার জন্য আমাদের ও সিম্বল লাগবে – দিবস উদযাপন লাগবে জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যায়ে!
এই কাজটা এই সরকারকেই করতে হবে! বিএনপি পারবে না| বিএনপির নীতি নির্ধারকদের এই লেভেল এর আইকিউ নেই, দূরদর্শিতা নেই, সক্ষমতা নেই| ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে ওরা স্বৈরাচার বিরোধী গণতন্ত্রের স্বপক্ষে কোন চেতনা গড়ে তুলতে পারে নাই| ওরা একটা স্মৃতি সৌধ ও করতেও পারে নি| ওদের ওই ব্যর্থতার মূল্য আজও আমাদের দিতে হচ্ছে|
১৯৫২ এর চেতনা যেমন মাতৃভাষার চেতনা,১৯৭১ এর চেতনা যেমন স্বাধিকারের চেতনা, ১৯৯০ চেতনা লালন করতে পারলে যেমন হতে পারতো গণতন্ত্রের চেতনা, ২০২৪ এর চেতনা হবে রাষ্ট্রের পেশী শক্তির হাত থেকে মানসিক মুক্তির চেতনা!
একটা ছবিতে একটা বাচ্চা মেয়েকে একটা প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি | প্ল্যাকার্ডে লিখা আছে “পুলিশ তুমি চ্যাটের বাল”| আমেরিকার ছাত্র আন্দোলন দেখেছি – ভিয়েতনাম যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক গাজা নিয়ে আন্দোলন| এদেশের ছেলে মেয়েরা কখনোই পুলিশ বা রাষ্ট্র কে কে ভয় পায় না| হাসতে হাসতে গ্রেফতার বরণ করে|
আমাদের বাংলাদশের ছেলে মেয়েরাও ২০২৪ এ এসে পুলিশ কে বিজিবি এ ৱ্যাব কে আর রাষ্ট্র কে ভয় না করতে শিখলো| এরা আবু সায়ীদ বুক চিতিয়ে গুলি খাবার পরও বার বার পুলিশের উদ্ধত বন্দুকের সামনে বুক ছিটিয়ে দাঁড়াতে শিখে গেলো|
একটা সময় ছিল গ্রামে পুলিশের দারোগা আসলে – আসে পাশের দশ গ্রাম খালি হয়ে যেত দারোগার ভয়ে!
সেই ব্রিটিশ আমলের দারোগার সময় থেকে আমরা অনেকদুর পথ পার করে এসেছি| এখন পুচকে একটা মেয়ে আগুন ঝরা চোখে পুলিশের দিকে গর্জে উঠতে পারে – “আজাদী কি তা বোঝেন? আজাদী জানেন?” – অথবা হিজাবি এক ছাত্রীর অগ্নিকন্ঠ; “আর একটা ছাত্রের জীবন নিবি – আমি তোর দশটা কোটা গিলে খাবো! গিলে খাবো” | এই নুতন চেতনা রাষ্ট্রকে চ্যাটের বাল বলার স্বাধীনতার চেতনা!
এই চেতনা টাকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে – নার্চার করতে হবে আর ধরে রাখতে হবে| আমাকে আর আপনাকেই এই কাজ টা করতে হবে| না করতে পারলে ২০২৪ এর সব অর্জন বৃথা যাবে!
(পাদটীকা: অনেকে বলছেন প্রধানমন্ত্রী কোথায় থাকবেন? এই গণভবনে শেখ হাসিনা ছাড়া বাংলাদেশের কোন সরকার প্রধানই থাকেন নি! আর প্রতিদিন প্রধানমন্ত্রীর গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যাবার জন্য বিজয় সরণি আর মহাখালী – পুরানো বিমান বন্দর রাস্তায় যে ভয়াবহ ট্রাফিক জ্যাম সৃষ্টি হয় তাও মাথায় রাখা দরকার! যুক্তরাষ্ট্রের বা যুক্তরাজ্যের বা ফ্রান্সের বা রাশার বা অন্যান্য সব দেশেই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন আর অফিস একই ভবনে! ওনারা জাস্ট হেটেই অফিসে চলে যান! আমি মনে করি পুরোনো বিমান বন্দরের সামনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ক্যাম্পাস অনেক বড়- ওর ভিতরেই একটা নুতন বাসভবন করে দেয়া যায়! যা ওয়াকওয়ে বা টানেল দিয়ে কানেক্ট থাকবে কার্যালয় এর সাথে! আর ক্যান্টনমেন্ট / বিমান ঘাঁটির এতো কাছে এই বাসস্থান অনেক বেশি সিকিউর থাকবে! )