ডেস্ক রিপোর্ট: মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, তাঁর সরকার অবিলম্বে প্রথম ধাপে ১৮ হাজার বাংলাদেশি শ্রমিককে মালয়েশিয়া যাওয়ার ভিসা দেওয়ার ব্যাপারে মনোনিবেশ করবে। তিনি বলেন, আমরা পুরো ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছি এবং আমরা অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চলছি। আমাদের শ্রমিক দরকার, কিন্তু তাদের আধুনিক দাস হিসেবে গণ্য করা যাবে না, সেটা বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশের শ্রমিকই হোক না কেন।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর ২০২৪) সফররত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শেষে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন। আনোয়ার ইব্রাহিম অবশ্য বাংলাদেশকে মালয়েশিয়ার বা মালয়েশিয়ায় বিদেশি যে কারও অপরাধমূলক কর্মকা- সম্পর্কে সতর্ক থাকার কথা স্মরণ করিয়ে দেন। ড. ইউনূস শ্রমিক ইস্যুতে এই ঘোষণা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এর আগে, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার আগে প্রধান উপদেষ্টা এবং মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংক্ষিপ্ত একান্ত বৈঠক করেন। প্রফেসর ড. ইউনূস ‘তারা চার দশকেরও বেশি সময় ধরে একে অপরের পরিচিত’ উল্লেখ করে বলেন, ঢাকায় তার পুরনো বন্ধুকে স্বাগত জানাতে পেরে তিনি ‘খুবই খুশি’ হয়েছেন।
আলোচনাকালে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি ছাত্র-জনতার নেতৃত্বাধীন বিপ্লব, আন্দোলনে ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগ এবং ক্ষমতাচ্যুত সরকারের গণহত্যা বিষয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
প্রধান উপদেষ্টা মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর শিক্ষকদের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন।
দুই নেতা তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে একই গাড়িতে দ্বিপক্ষীয় ভেন্যুতে গমন করেন। বৈঠকে তারা রাজনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের তিনটি মূল বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এতে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, শিক্ষা, প্রযুক্তি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, জনশক্তি রপ্তানি, উচ্চশিক্ষা সহযোগিতা, যোগাযোগ, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়।
এছাড়া আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আসিয়ানে ‘সেক্টরাল ডায়ালগ পার্টনার’ হওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে উত্থাপিত হয়। মালয়েশিয়া ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে আসিয়ানের পরবর্তী চেয়ার হতে যাচ্ছে। ড. ইউনূস বলেন, তাদের বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়েও আলোচনা হয়েছে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ‘ব্যাপক কৌশলগত অংশীদারিত্ব’ এবং বাংলাদেশে মালয়েশিয়ার কোম্পানিগুলোর সমস্যা দ্রুততার সঙ্গে সমাধানের ওপর জোর দেন।
আনোয়ার ইব্রাহিম বলেন, তারা দুর্নীতি, শাসনব্যবস্থা ও মৌলিক অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর ব্যাপারে আপস করেন না। তিনি আরো বলেন, যত দ্রুত সম্ভব যৌথ কমিশনের বৈঠক হতে পারে। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ৫৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে দুপুর ২টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে বিমানবন্দরে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
প্রায় এক দশক পর মালয়েশিয়ার কোনো প্রধানমন্ত্রীর এটি প্রথম বাংলাদেশ সফর। এছাড়া এটি ছিল গত ৮ই আগস্ট ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর বাংলাদেশে কোনো সরকার প্রধানের প্রথম সরকারি সফর। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে তার সংক্ষিপ্ত সফর শেষ করে সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা ত্যাগ করেন। (বাসস)
Source: প্রবাস বার্তা