মতামত
ট্রেন্ড

শেখ হাসিনার গোপন তথ্য ফাঁস

হাইলাইট
  • * আন্দোলন-সংগ্রামে নিহতদের লাশ দেখে এসে স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেশি খেতেন হাসিনা
  • * এখন হানিফ একা খাবে কেন? আমাদেরও ভাগ দিতে হবে
  • *চল, এয়ারপোর্টে যাই, আপদের লাশটা এনে কবরে ফেলি

৭১-৭২-৭৩ নং পৃষ্ঠায় শেখ হাসিনার সাবেক পিএস মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান রেন্টু লেখেন,

শেখ হাসিনা এবং হানিফ

পরদিন বিকেল বেলা বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা বললেন, কিরে, এত লোক আসে যায়, এত ফুলের তোড়া, ফুলের মালা, কিন্তু হানিফকে (সদ্য নবনির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ) দেখছি না! এখন পর্যন্ত একটা ফোনও করলো না। ব্যাপারটা কি? ঠিক আছে তো, না ভাইগা টাইগা গেল। এই মেয়র হওয়ার লোভেই কিন্তু হানিফ স্বৈরাচারী জেনারেল এরশাদের জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়েছিল। এরশাদের কাছে চান্স না পেয়ে হানিফ মেয়র হওয়ার জন্য আবার আমার কাছে ফিরে এসেছে । আমি এক কোটি সাতত্রিশ লক্ষ টাকা খরচ করে হানিফকে মেয়র করেছি। তাড়াতাড়ি খোজ খবর নাও। ফোন কর এবং একজন হানিফের বাড়ি গিয়ে দেখ আসল ব্যাপার কি?

সদ্য নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফের বাসায় ফোন করে বলা হলো, জননেত্রী বিরোধী দলীয় নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা হানিফ ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলবেন।

জবাবে মিসেস হানিফ বললেন, তিনি অসুস্থ এখন কথা বলতে পারবেন না। বললেন, শীঘঘ্বই হানিফের বাসায় যাও, দেখ গিয়ে ঘটনা খারাপ।

তখন সন্ধ্যা হয়ে আসছে, মেয়র হানিফের বাড়ি ছুটে যাওয়া হলো । মেয়র হানিফ তখন দশ-বারো জন লোকের সঙ্গে বসে কথা বলছেন। সেখানেই শোনা গেল বিকেলে লালবাগে বিএনপির পরাজিত কমিশনার প্রার্থী আব্দুল আজিজ গুলি করে সাতজন লোককে হত্যা করেছে। জননেত্রী শেখ হাসিনা কথা বলতে চেয়েছেন বলায় মেয়র হানিফ বললেন, নেত্রীকে আমার সালাম দিও, বলো আমার শরীরটা খুব খারাপ, আমি কথা বলতে পারছি না। শুধু লালবাগের খুনের জন্য আমি ওনাদের সাথে কথা বলছি।

মেয়র হানিফের বাসা থেকে সোজা মিন্টু রোডে এসে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে লালবাগের বিএনপি কমিশনার প্রার্থী আজিজ কর্তৃক সাত জনকে খুন করার সংবাদ দিলে বঙ্গবন্ধু কন্যা খুশিতে জিন্দেগি জিন্দেগি গান গাইতে থাকেন আর নাচতে থাকেন।

রুমালে গ্রিসারিন
পরদিন সকালে লালবাগে নিহত সাত জনের লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে দেখতে যাওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু কন্যা হাসিনা বলতে থাকেন, আমার (শেখ হাসিনা) রুমালে একটু গ্লিসারিন মেখে দাও, এঁ যে, নায়িকারা অভিনয়ের সময় গ্লিসারিন দিয়ে চোখের পানি বের করে কান্নার অভিনয় করে । আমার কুমালে এঁ রকমের গ্রিসারিন লাগিয়ে দাও, যাতে আমি লাশ দেখে রুমাল ধরতেই চোখে পানি এসে যায়। একজন বলল, গ্লিসারিনের দরকার নেই, শুধু চোখে রুমাল ধরে রাখবেন তাতেই মনে হবে আপনি কাদছেন। আর আমরা ফটো সাংবাদিক (ফটো সাংবাদিক) ভাইদের বলে দেব ছবির নীচে আপনি কাঁদছেন ক্যাপশন লাগিয়ে দিতে ।

হাসপাতালের মর্গে নিহত সাত জনের লাশ দেখে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা চোখে রুমাল ধরলে সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকগণ অসংখ্য ছবি তুলতো। ছবি তোলা শেষে বঙ্গবন্ধু কন্যা গাড়িতে উঠলেন। গাড়ি চলতে শুরু করলো । তখনও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার চোখে রুমাল । গাড়ির চালক ড্রাইভার জালাল বলল, আপা (শেখ হাসিনা) এখন রুমাল নামান ফটো সাংবাদিক নেই।

গাড়ির সকল আরোহী হেসে উঠলো । জননেত্রী শেখ হাসিনা বললেন, ঠিক মতো দেখেছ তো, কোন ফটো সাংবাদিক নেই তো?

– না, নেই।
– তাহলে আমি (শেখ হাসিনা) এবার রুমাল নামাই।

আজ আমি বেশি খাব

২৯ নং মিন্টু রোডের বাসায় এসে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বললেন, ময়না (মিসেস মতিযুর রহমান রেন্টু) খাওয়া-দাওয়া বেশি করে এনেছ তো? লাশ দেখে এসেছি, লাশ। আজ আমি বেশি করে খাব। ”

তারপর তিনি জিন্দেগী জিন্দেগী গাইতে গাইতে, নাচতে লাগলেন। সত্যি সত্যিই তিনি (শেখ হাসিনা) অস্বাভাবিক রকমের বেশি খেলেন। এমনিতেই তিনি (শেখ ‘হাসিনা). বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে নিহতদের লাশ দেখে এসে স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেশি খেতেন।

কিন্তু আজ খেলেন অস্বাভাবিকের চাইতেও অনেক বেশি৷

টাকার ভাগ দিতে হবে

টুঙ্গিপাড়ায় শেখ হাসিনার পিতা আওয়ামী লীগের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের কবরে গিয়ে মেয়র মোহাম্মদ হানিফের আনুষ্ঠানিক শপথ নেওয়ার দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা হলো। ঢাকা থেকে বঙ্গবন্ধু কন্যা বিরোধী দলীয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঢাকার মেয়র মোহাম্মদ হানিফকে সঙ্গে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় যাবেন এবং সেখানে বেসরকারীভাবে হানিফ মেয়র হিসেবে শপথ নেবেন। নির্দিষ্ট দিনে সকালবেলা সকলেই টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত। কিন্তু মেয়র হানিফ এলেন না। টুঙ্গিপাড়ায় যাওয়া হলো না।

মেয়র হানিফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বললেন, তিনি অসুস্থ। এরপর আর মেয়র হানিফ শেখ হাসিনার বাসা, আওয়ামী লীগ অফিস কোথাও এলেন না। আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়র পদে মোহাম্মদ হানিফ শপথ নিলেন। ঢাকার মেয়রের দায়িত্বভার নিলেন। হটলাইনের রেড টেলিফোনে প্রতিদিন দুই একবার প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন। প্রতিদিন না হলেও প্রায়ই প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন এবং যুক্তি-পরামর্শ করে সিটি করপোরেশন পরিচালনা করেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও আওয়ামী লীগ অফিসের ব্রিসীমানায়ও আসেন না। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী বিরোধী নেত্রী শেখ হাসিনা কপাল চাপড়ান আর বলতে থাকেন, নিমকহারাম, বেঈমান, ওরে আমি এক কোটি সাত ত্রিশ লক্ষ টাকা খরচ করে মেয়র করেছি। বেঈমান, নিমকহারাম।

যে আসে, যাকে পান তার কাছেই তিনি (শেখ হাসিনা) এই কথা বলতে লাগলেন।

একজন বল, ঠিক আছে হানিফ ভাই মেয়র হয়েছে, টাকা কামাবে, টাকা খাবে খাক, আমরা তো আর ভাগ চাই না! কিন্তু দলের কাজ করবে না কেন?

জবাবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বললেন, কেন? একা টাকা খাবে কেন? আমাদের ভাগ দিতে হবে। ওকে এক কোটি সাতত্রিশ লাখ টাকা খরচ করে মেয়র বানিয়েছি। তোমাদের হাত দিয়েই তো এ টাকা খরচ করেছি। হানিফ তো এক পয়সাও খরচ করে নি। সব আমি করেছি। এখন হানিফ একা খাবে কেন? আমাদেরও ভাগ দিতে হবে। নইলে আমি শেখ হাসিনা একদিন না একদিন এর উসুল করে ছাড়ব।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা কথা বলবেন, কত শতবার ফোন করা হয়, মেয়র হানিফ ফোন ধরে না । আসতে বলা হয়, দেখা করতে বলা হয়, হানিফ আসে না, দেখা করে না। লোক পাঠালে মেয়র হানিফ বলে, যা যা, যেই জায়গায় আছিস সে জায়গায় যা। ক্ষমতায় যাওয়া লাগবো না। যে পর্যন্ত আগাইছস এ বিরোধী দল পর্যন্তই থাক, আর ক্ষমতায় যাওয়া লাগবো না। আমি তোগে লগে নাই।

জাহানারা ইমাম মরেছে, আপদ গেছে
১৯৯৪ সালের ২৬শে অথবা ২৭শে জুন সন্ধ্যাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি টেলিফোন করে ২৬শে জুন ‘৯৪ শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মৃত্যু হয়েছে বলে সংবাদ দিলে, জননেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আনন্দে নাচতে থাকেন আর বলতে থাকেন মিষ্টি খাও, মিষ্টি। আমার একটা প্রতিদ্বন্দ্বী দুনিয়া থেকে বিদায় হয়েছে। আল্লাহ বাচাইছে। নেত্রী হতে চেয়েছিল। আমার জায়গা দখল করতে চেয়েছিল। জাহানারা ইমাম মরেছে আপদ গেছে। বাচা গেছে। আমার জায়গা দখল করতে চেয়েছিল। তোমরা জান না, ইভিয়ান গোয়েন্দা এজেন্সি ‘র’ (ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার নাম “র’) আমার পরিবর্তে জাহানারা ইমামকে নেতৃত্বে বসাতে চেয়েছিল। বেটি মরছে, মিষ্টি খাও। ফকিরকে পয়সা দেও।

এর কয়েকদিন পরে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের লাশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে জিয়া আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর এলে, জননেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, চল, এয়ারপোর্টে যাই, আপদের লাশটা এনে কবরে ফেলি।

এরপর জননেত্রী শেখ হাসিনা তার লাল রঙের নিশান পেট্রোল জীপে করে বিমান বন্দর-এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন। যেতে যেতে বলতে লাগলেন, বেটি (জাহানারা ইমাম) আমারে অসম্ভব জ্বালাইছে (জ্বালিয়েছে)। ওর মরা মুখও দেখতে ইচ্ছে করে না। কিন্তু না যেয়ে তো উপায় নেই। পলিটিক্স-এর (রাজনীতির) ব্যবসায় ইচ্ছে না থাকলেও করতে হয়।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বিমান বন্দরের রানওয়ে পর্যন্ত গেলেন ঠিকই, কিন্তু শহীদ জননী জাহানারা ইমামের লাশের ধারে-কাছেও গেলেন না।

তিনি ও তার স্ত্রী একটানা ১৭ বছর শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন। আওয়ামী সরকার ১৯৯৬ সালে ‘আমার ফাসি চাই’ বইটি বাজেয়াপ্ত করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button