প্রবাসমালয়েশিয়া

মালয়েশিয়ায় ২শ বাংলাদেশি কর্মীর বেতন না দেয়ায় তদন্তে শ্রম বিভাগ

ডেস্ক রিপোর্ট:
মালয়েশিয়ায় কাজ করেও পাঁচ মাস ধরে বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না ২শ বাংলাদেশি কর্মী। প্রতিবাদ করায় বৈধ কর্মীকে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে দেশেও ফেরত পাঠিয়েছে সেলাঙ্গও রাজ্যের ক্লাং এর ‘কাওয়াগুচি’ নামের কোম্পানি। কর্মীদের এমন অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে দেশটির শ্রম বিভাগ। এর আগে ৩০ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটির বাইরে বিক্ষোভ করায় উল্টো হুমকি ধামকি দেওয়া হয়। সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতা চান ভুক্তভোগী কর্মীরা। এমন সংবাদ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ারপর আমলে নেয় হাইকমিশন। ২ আগস্ট সোমবার ভুক্তভোগী কর্মীরা হাইকমিশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের আলোকে হাইকমিশন দেশটির শ্রম বিভাগ ও কোম্পানীর সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চালায় এবং সে দেশের শ্রম বিভাগ বিষয়টি নজরে এনে তদন্ত শুরু করেছে বলে ফ্রি মালয়েশিয়া টুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার  (৫ আগস্ট) ফ্রি মালয়েশিয়া টুডের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, কোম্পানি এবং এর প্রধান গ্রাহকদের কাছে একটি ই-মেইলে, অভিবাসী অধিকার কর্মী অ্যান্ডি হল সাতজন শ্রমিকের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন শেয়ার করেছেন যা তাদের জোরপূর্বক শ্রমের অভিযোগের বিবরণ দেয়।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে শ্রমিকদের ছয় মাস পর্যন্ত বেতন দেওয়া হয়নি, যার ফলে তারা এবং তাদের পরিবারগুলি চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৩ সালের নভেম্বরে মালয়েশিয়ায় আসেন প্রায় ২০০ বাংলাদেশি কর্মী। অনেকেই নিজের সহায় সম্বল বিক্রি করে কেউবা আবার চড়া সুদে ঋণ নিয়ে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ করে পাড়ি জমান দেশটিতে।

প্রথম দিকে ধাপে ধাপে চার মাসের বেতন পরিশোধ করলেও সবশেষ পাঁচ মাসের বেতন আটকে দিয়েছে নিয়োগকর্তারা। এমনকি বেতন না দিয়ে উল্টো হুমকি ধামকি দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার বকেয়া বেতনের দাবিতে কোম্পানির চত্বরে জড়ো হন কর্মীরা। এর আগে, পাওনা বেতন পাওয়ার দাবিতে অবস্থান নেওয়ায় দেশটির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সাহায্য নিয়ে ৪ বাংলাদেশিকে ৫ বছরের জন্য ব্ল্যাক লিস্ট করে দেশে ফেরতও পাঠায় কাওয়াগুচি নামের ওই কোম্পানি।

এসব কর্মীদের ৩ ঘণ্টা ওভার টাইমসহ প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা করে কাজ করিয়ে নিলেও থাকা-খাওয়াসহ নানা সমস্যায় পড়েছেন অনেকেই। ভুক্তভোগী কর্মীরা বলছেন, আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে প্রত্যেক মাসের বেতন ঠিক সময়ে দেওয়া হবে। কিন্তু তারা সে আশ্বাস রাখছে না। এই অবস্থায় আমরা দেশ থেকে যে ঋণ করে এসেছি সেই ঋণ পরিশোধ করার সক্ষমতা আমাদের নেই। কোম্পানির কাছে এ বিষয়ে বলা হলেও তারা গড়িমসি করে। এমনকি উল্টো দেশে ফেরত পাঠানোরও হুমকি দেওয়া হয়।

বাংলাদেশের কয়েকটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় আসার পর দেশটির বিভিন্ন প্রদেশে অনেককে আটকে রাখার অভিযোগ রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। চাকরির পাশাপাশি প্রতারক কোম্পানির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তাদের।

মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, সেলাঙ্গর শ্রম বিভাগ দাবিগুলি খতিয়ে দেখছে, অন্যদিকে বিষয়টির ঘনিষ্ঠ আরেকটি সূত্র জানিয়েছে যে বিভাগটি কর্মীদের অভিযুক্ত দুর্ব্যবহারের বিষয়ের একটি প্রতিবেদন তৈরি করছে।

সোমবার কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশনে করা অভিযোগপত্রে কয়েকজন শ্রমিক বলেছেন, গত নভেম্বরে কোম্পানিতে যোগদানের পর থেকে তাদের সময়মতো বেতন দেওয়া হয়নি। শ্রমিকদের নিয়োগকর্তারা যখনই তাদের বকেয়া বেতনের বিষয়টি উত্থাপন করেন তখনই তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর হুমকি দেন।

ভুক্তভোগী একজন কর্মী বলেন, ৩০ আগস্ট অবৈতনিক বেতনের জন্য কোম্পানির বাইরে কর্মীরা বিক্ষোভ করায় কোম্পানি তাদের পানি, বিদ্যুৎ এবং গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয়। এভাবেই নিয়োগকর্তাও লোকজন আমাদের ওপর নির্যাতন ও হুমকি দিচ্ছে বলে জানান এ কর্মী।

Source: প্রবাস বার্তা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button