ডেস্ক রিপোর্ট: টানাপোড়েনের সংসার ছিল বরিশালের আগৈলঝাড়ার সান্টু মিয়াদের। ১০ সদস্যের সংসারের চাকায় গতি আনতে তিন দশক আগে পাড়ি জমান মালয়েশিয়ায়। একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিয়ে বেশ চলছিল তাঁর প্রবাসজীবন। খেয়েদেয়ে আয়ের উল্লেখযোগ্য অংশ পাঠাতেন মা-বাবাকে। এই জীবনে বাড়তি আনন্দ যোগ হয় দেশটির এক নাগরিককে বিয়ে করার পর। সেই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। প্রতারিত হয়ে খেটেছেন জেল, বর্তমানে দু’মুঠো খাবারের জন্য ঘুরছেন রাস্তায় রাস্তায়। খুইয়েছেন দেশে ফেরার সুযোগ। দীর্ঘদিন ধরে ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন সান্টুর মা মেরেজান বেগম।
জানা গেছে, সান্টুদের গ্রামের বাড়ি ছিল আগৈলঝাড়ার বাগধায়। সেখান থেকে ১৯৯৩ সালে মালয়েশিয়া যান তিনি। এর কয়েক বছর পর লঞ্চ দুর্ঘটনায় মারা যান তাঁর বাবা ও এক বোন। পরিবারের অন্য সদস্যরা ঠিকানা বদলে বসবাস করতে থাকেন উপজেলার খাজুরিয়া গ্রামে। এদিকে মালয়েশিয়ার এক নারীকে বিয়ে করে সুখের সংসার গড়েন সান্টু। দাম্পত্য জীবনে একটি পুত্র সন্তানও হয়। কিন্তু কিছুদিন পর শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে নেশা করার অপবাদে মারধর করে তাড়িয়ে দেয়। চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানে পাসপোর্ট আটকে থাকায় কাজ জোটাতে পারেননি এ প্রবাসী। এর পর থেকে অনেকের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো কূলকিনারা হয়নি। উল্টো অবৈধ প্রবাসী হিসেবে গ্রেপ্তার হয়ে কয়েকবার জেল খাটতে হয়।
অবৈধ জীবনের অবসান ঘটাতে সান্টু অন্যের বুদ্ধিতে নেন রোহিঙ্গাদের জন্য ইস্যু করা ইউএন কার্ড। সেই কার্ড নিয়ে বৈধতা পেলেও মেলেনি চাকরি, গ্রামে ফিরতে গিয়ে আটকা পড়েন বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে। বর্তমানে উন্মাদের মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘোরেন, কেউ কিছু দিলে খান, রাতযাপন করেন পার্ক-ফুটপাতে। এরই মধ্যে তাঁর মুখে বাংলা ভাষা শুনে তাঁর চলাফেরা ভিডিও করে গ্রামের কয়েকজনকে পাঠান প্রবাসী শাহিন ফকির।
সেই ভিডিও নজর কাড়ে পরিবারের সদস্যদের। হারানো সন্তানের মুখ দেখে আবেগাপ্লুত হন তাঁর মা। যোগাযোগ করা হয় ভিডিও ধারণকারীর সঙ্গে। এক পর্যায়ে পরিবারের পক্ষ থেকে মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত দুই প্রবাসী শাহিনের সঙ্গে দেখা করে সান্টুর বিষয়ে জানতে চান। তাদের নিয়ে ভবঘুরের সন্ধানে বের হয়ে কয়েক দিনেও তার দেখা পায়নি কেউ। তারা বিভিন্ন জায়গায় সান্টুকে খুঁজছেন। একই সঙ্গে পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে বাড়ি ফেরাতে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন স্বজনরা।
সান্টুর শতবর্ষী মা মেরেজান বলেন, ‘মৃত্যুর আগে শেষ বার ছেলেকে এক নজর দেখার জন্য সৃষ্টিকর্তার কাছে দু-হাত তুলে চোখের জল ফেলছেন। ছেলেকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সরকারের কাছে জোর দাবি জানায়।’
Source: প্রবাস বার্তা